সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / পাহাড় কেটে ভাঁজে ভাঁজে ১২ টি ক্যাম্প : পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে এগারো লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

পাহাড় কেটে ভাঁজে ভাঁজে ১২ টি ক্যাম্প : পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে এগারো লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

উখিয়ায় পাহাড় কেটে ভাঁজে ভাঁজে এভাবে তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গা বসতি।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

বর্ষায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে উখিয়ার বারো ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে চলাচলের পথ। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে টানা বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের আশংকা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে ষোলো হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়।

সম্প্রতি উখিয়ার বালুখালী, জামতলিসহ কয়েকটি স্থানে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য পাহাড় কেটে ভাঁজে ভাঁজে তৈরি করা হয়েছে বাড়ি। লালমাটির পাহাড়ের শরীরে বসতি স্থাপন করেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তৈরি করা হয়েছে মাদ্রাসা, মক্তব। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার, দোকানপাট। প্রতিটি ক্যাম্পে পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা হচ্ছে বড় আকারের যানবাহন চলাচলের উপযোগী সড়ক। একাধিক রোহিঙ্গা জানান, জুন-জুলাই পুরো মাসজুড়ে বর্ষাকাল। এ সময় টানা বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের ঝুঁকি রয়েছে।

ইতোমধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কুতুপালং মধুরছড়া শরণার্থী ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মারা যায় ক্যাম্পের ডিডি ব্লকের হাবিবুর রহমানের মেয়ে দিল খায়াজ। সন্ধ্যার আগে রোহিঙ্গা শিশুরা পাহাড়ি খাদের নিচে খেলাধুলা করছিল। হঠাৎ পাহাড়ের মাটি ধসে পড়লে সেই শিশু চাপা পড়ে। স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করতে করতেই খায়াজ মারা যায়। গত ৪ মে একই ক্যাম্পের মধুরছড়া আই ব্লকের পাহাড় ধসে রুহুল আমিনের বারো বছরের শিশু আজিজা আক্তার মারা যায়। একই সময়ে আকিদা খাতুন (১০) ও রাশেদা আক্তার (১১) নামে আরো দুটি শিশু আহত হয়। তাদেরকে বালুখালী এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চট্টগ্রামের দায়িত্বরত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, ইতোমধ্যে ১১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিশু রয়েছে। যাদের বয়স দশ বছরের নিচে।

জানা যায়, সরকার উদ্ভাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে প্রায় চার হাজার একর ভূমি বরাদ্দ দেয়। বনবিভাগের সংরক্ষিত এলাকায় পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে ১২ টি ক্যাম্প। তা হলোঃ বালুখালী-১, বালুখালী-২, বালুখালী-৩, কুতুপালং, মোছনী, উনচিপ্রাং, হাকিমপাড়া, জামতলী, পালংখালী, তাজিনারমারখোলা, ও বাঘঘোনা। এর বাইরে মধুরছড়ায়ও রোহিঙ্গাদের বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে কুতুপালং ও মোছনী ক্যাম্পে আগে থেকেই রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

বিশ্ব মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী জানান, সরকারি হিসাব অনুযায়ী রোহিঙ্গার সংখ্যা এগারো লাখের সামান্য বেশি হলেও বারো ক্যাম্পে প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করেছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার জরিপে আগামী আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের টানা বৃষ্টি হলে এক লাখ ত্রিশ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা বন্যা, ভূমিধস ও অতিবৃষ্টিতে ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করছে। সম্ভাব্য এসব ঝুঁকির কবল থেকে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগর উপকূলে অবস্থিত উখিয়া ও টেকনাফের বাসিন্দারা আগে থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে। রোহিঙ্গা ছাড়াও ক্যাম্প এলাকাতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি লোকজনের বসবাস রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তাজিনিরমার খোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বনবিভাগের শত একরের বেশি পাহাড় রোহিঙ্গা দিন মজুর দিয়ে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। গত পাঁচদিন ধরে প্রতিটি পাহাড়ে দুই থেকে তিনশ রোহিঙ্গা শ্রমিক দৈনিক চারশত টাকা মজুরিতে মাটিকাটার কাজ করছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, একদিকে পাহাড় টিলা ও বন উজাড় হচ্ছে অন্যদিকে এসব মাটি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট খাল, ছড়া ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। তাজিনিমার খোলার মতো কুতুপালং মধুরছড়া এলাকায়ও প্রায় সাড়ে পাঁচশ একর বন বিভাগের সংরক্ষিত পাহাড় কেটে ভরাট করা হচ্ছে জলাশয়।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়,পাহাড়কাটা, জলাশয় আর পাহাড়ি ছড়া ভরাটের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থলের সবটুকু জমি যদিও বনবিভাগের, কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারিভাবে দেয়া প্রায় তিন হাজার একর বনভূমির সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত না থাকায় বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার একরের মত বনভূমি রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্টদের দখলে চলে গেছে। এসব বনভূমিতে সৃজিত বনায়নের কয়েক কোটি গাছ রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে কেটে ফেলেছে। এছাড়াও প্রতিদিন অন্তত দশ ট্রাক জ্বালানি কাঠ রোহিঙ্গারা সংগ্রহ করেছে বনাঞ্চল থেকে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছি। এতে পরিবেশ, বনায়ন ও আর্থ-সামাজিকতার কিছু ক্ষতি হচ্ছে।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/water-distribution-lama-mayor-rafiq-30-4-24-1/

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর পক্ষ থেকে লামা বাজারে জনসাধারণের মাঝে নিরাপদ পানি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/