নিজস্ব প্রতিনিধি; পেকুয়া :
কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় জামাতার হাতে খুন হয়েছে সৌদি প্রবাসি শ^শুর আব্দু শুক্কর (৫৫)। মেয়ের ১ম সংসারের ছেলে লালন পালন নিয়ে মেয়ের সাবেক স্বামীর সাথে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এ সময় মেয়ের দ্বিতীয় স্বামীর (বর্তমান স্বামী) আঘাতে শ্বশুর ওই প্রবাসি ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ রাতে দু’দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় পুলিশ ওই স্থান থেকে সন্দেহভাজন কাইসার নামে এক যুবককে আটক করে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (৬জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেকগুলদি সরকারিঘোনা এলাকায়। নিহত আব্দু শুক্কর ওই এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে।
আটককৃত কাইসার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে আটকের কয়েক ঘন্টা পর তাকে ছেড়ে দেন পুলিশ। এ বিষয়ে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছেন বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। মেয়ের বর্তমান স্বামীর প্রহারে ওই প্রবাসি নিজ বাড়ির নিকট প্রান হারিয়েছে।
অপর একটি পক্ষ জানায় ঘটনায় প্রবাসি হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। তবে পুলিশের তৎপরতায় মৃত্যু রহস্য ও এর সন্দেহকে ঘুনিভুত করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.ইসমাইল সিকদার রাতে মৃত.ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে জাহির করতে মোচলেখা হাতিয়ে নেয়। এমনকি গভীর রাতে মরদেহ নিয়ে পেকুয়া থানার পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে যান।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক হারুনুর রশিদ জানান, গভীর রাতে মৃত.ব্যক্তিকে নিয়ে ইউপি সদস্য ইসমাইল, পেকুয়া থানা পুলিশদল এসে আমাকে ডেকে নিয়ে চেম্বারে যায়। তারা আমার কাছ থেকে স্বাভাবিক মৃত্যুর একটি সনদ হাতিয়ে নেয়। এটি অনেকটা জিম্মি ও বাধ্য করে আমার কাছ থেকে তারা এ সনদ আদায় করেন। আসলে আমি সরকারি কোন চিকিৎসক নই। এরপরেও তারা আমাকে এক প্রকার বাধ্য করে সনদ নেয়ার ঘটনাটি আমাকে বিচলিত করেছে। এ বিষয়ে আমার সনদের গুরুত্ব আছে বলে মনে করিনা। তারা মরদেহ নিয়ে দু’দফা আমার এখানে আসেন।
ইউপি সদস্য ইসমাইল সিকদার জানায় তিনি স্ট্রোক করেছেন। পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে মোচলেকা দেন। আমি মেম্বার হিসেবে সহযোগিতা করতেই সেখানে গিয়েছিলাম। ডাক্তারের কাছে এসআই বিমলসহ পুলিশ নিয়ে আমিও যাই। জিম্মি করে সনদ নেয়া হয়নি। এসআই বিমল কান্তি দেব জানায় আমি চিকিৎসকের কাছে যাইনি। বিষয়টি নিয়ে ওসি স্যার চিকিৎসকের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেছেন।
পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুঁইয়া জানায় জিম্মি করে সনদ নেয়ার প্রশ্নই আসেনা। এসপি স্যার চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে বলেছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চিকিৎসক আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। এছাড়া নিহতের পরিবারের পক্ষে যদি আইনের আশ্রয় বা সহযোগিতা প্রার্থনা না করলে লাশ নিয়ে পুলিশের অতি উৎসাহী হওয়ার অবকাশ নাই।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নিহত আব্দু শুক্করের মেয়ে শারমিনের সাথে বারবাকিয়া পাহাড়িয়াখালী এলাকার শামসুল আলমের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর সংসার বিচ্ছেদ হয়। শারমিন দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে ইলিয়াসকে সম্প্রতি বিয়ে করে। ১ম সংসারে ছেলে আশেক উল্লাহ মায়ের কাছে থাকে। তাকে নিয়ে মা ও পিতার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ঘটনার দিন রাতে আশেককে নিয়ে যেতে রাতে বারবাকিয়া থেকে লোকজন আসে আব্দু শুক্করের বাড়িতে। এ সময় শারমিনের দ্বিতীয় স্বামী ইলিয়াস ও আগত লোকদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় আব্দু শুক্কর নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় ইলিয়াসের অর্তকিত প্রহারে শ্বশুর আব্দু শুক্কুর মারা যান।
You must be logged in to post a comment.