পৌষের শুরুতেই কনকনে শীতের কাপনে চরম দূর্ভোগে পড়েছে টেকনাফ উপজেলার গরীব, দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মত কক্সবাজার জেলার সর্বদক্ষিণে পর্যটন নগরী টেকনাফের মানুষ ভয়াবহ শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়েছে। শীত মৌসুম শুরু হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মৌসুমের শুরুতেই তীব্র শীতের কামড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবন যাত্রা। এর কারণ শুক্রবার সকাল থেকে শৈত্য প্রবাহের হিমেল হাওয়া, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে শীতের তীব্রতা প্রখর হয়ে উঠে। এতে টেকনাফ উপজেলাবাসীর স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকজন ও বাস্তুহারা, অসহায় দরিদ্রদের মাঝে নেমে আসে দুর্বিসহ জীবন। এর পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ট ও কোমলমতি শিশুদের মাঝে দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রার্দুভাব। এতে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ক্লিনিককে রোগীদের ভিড় করতে দেখা গেছে। টেকনাফের বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষেরা বলেন, পৌষ-মাঘ শীতের মৌসুম হলেও শুরুতেই এধরনের তীব্র শীতের প্রখর গত ৪০/৫০ বছরে দেখে যায়নি। তার উপর বৃষ্টি হওয়ায় সহজে শীতের কবলে পড়ে যায় সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি শীত পড়লেও টেকনাফের মানুষ কখনো হঠাৎ করে এধরনের শীতের কবলে পড়েনি। মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত শীতের কারণে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের পেশাগত কাজে যোগ দিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা খবর নিয়ে জানা গেছে তীব্র শীতের প্রকোপে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগ। ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া রোগে ভুগছে বেশির ভাগ শিশুরা। গণ কুয়াশা ও বৃষ্টির কারণে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার শাক-সব্জি ও বীজতলাগুলো। আবার এদিকে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবি, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা। প্রচন্ড শীতে তাদের বেড়ে গেছে চরম দুঃখ দুর্দশা। কারণ, তারা সময় মত কাজে বের হতে পারে না। অনেক রিক্সা চালক শীতের ভয়ে রিক্সাও চালাতে চায় না, দিন মজুররাও শীতের কারণে কাজে যেতে পারছে না। কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, হঠাৎ করে প্রচন্ড শীতের কারণে সবে মাত্র বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিত হতে হচ্ছে না বিধায় তীব্র শীতের প্রখর তারা মোটামুটি রেহাই পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাবরাং’র ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধ ছলিম উল্লাহ বলেন, “অ বাজি পৌষ মাসের শুরুত যদি এন শীষ পরে, মাঘ মাসত ত বাঘ গুজুরাইব”।
এদিকে টেকনাফের মার্কেটগুলোতে শীতের কাপড় কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এসুযোগে দোকানদাররা শীত বস্ত্রগুলো দ্বিগুণ বিক্রি করছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষরা শীতবস্ত্র ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছে। শিক্ষিত সমাজের মধ্যে কয়েকজন মত প্রকাশ করে বলেন, পৌষের শুরুতে প্রচন্ড শীতের কারণ হচ্ছে, হঠাৎ করে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা হিমেল হাওয়ার আংশিক শৈত্য প্রবাহ এসেছে বিধায় শুরু হয়েছে হাড় কাপানো কনকনে শীত।
আবহাওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, দুয়েক দিনের মধ্যে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমলেও মাসের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ আবারও বাড়বে।
টেকনাফ উপজেলার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগী বেশি হওয়ার কারণে চিকিৎসকদের রোগীদের সেবা দিতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.