ফলোআপ- লামায় গ্রামীণ ফোনের মালবাহী ট্রাক উল্টে নিহত ৭ : আহত ৭

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা/মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া:

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলায় বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৭টায় লামা-চকরিয়া রোডে ইয়াংছা নামক স্থানে গ্রামীণ ফোনের মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে ৭জন নিহত ও ৭জন গুরুতর আহত হন। নিহতরা হলেন, হাসান (৩৫), রকীব (৪০), হাসান, (৩৫) রাজীব (৪০), রবিন (৩৫), আফতাব হোসেন (৫৫), আমজাদ হোসেন (৪৫) ও আলেক (৩৪)। নিহত সকলের বাড়ী পাবনা জেলার ইশ্বরদী ইউনিয়নের রহিমপুর ও কামালপুর এলাকায় বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মিরিঞ্জা নামক স্থানে গ্রামীণ ফোনে মোবাইল টাওয়ার নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী আনার সময় লামা-চকরিয়া রোডের ইয়াংছা নামক স্থানে ট্রাকটি (গাড়ী নং- ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৩৫৬৮) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে ঘটনাস্থলে ৪জন মারা যায়। গুরুতর আহত ১০ জনকে পাশ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আরো ৩জন মারা যায় বলে জানায় দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিক মোঃ সোহেল। আহত ৭জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানায় চকরিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার। ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে গেছে।

সেনাবাহিনী ও পুলিশ দূর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি উদ্ধার করে এবং আহতদের দ্রুত চিকিত্সার জন্য চকরিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তা দেখা না যাওয়ায় এঘটনা ঘটেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াই নু অং চৌধুরী, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ, আলীকদম সেনা জোনের কাপ্টেন নাফিউ, লামা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল হোসেন।

উদ্ধার তত্পরতার কাজে দায়িত্বরত লামা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক রবিউল ইসলাম ৭জন নিহতের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অতিমাত্রায় লোডের কারণে গাড়ীটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য বান্দরবান জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানোর কারণে ২টি জীপ ও ৪টি বাস গাড়ীকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এদিকে নিজস্ব প্রতিনিধি মুকুল কান্তি দাশ চকরিয়া থেকে জানান, চকরিয়া-লামা সড়কে গ্রামীণফোন টাওয়ারের মাল বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে সাতজন নিহত ও অপর সাতজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইয়াংছা চেক পোস্টের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে চকরিয়া-লামা সড়কের ইয়াংছা চেক পোস্টের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ও আহতেরা ট্রাকে করে লামার মিরিঞ্জা পাহাড়ে গ্রামীণফোনের একটি টাওয়ার নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে শ্রমিক হিসেবে লামা যাচ্ছিলেন।

নিহতরা হলেন সাতক্ষীরা জেলার ধলাকাটা এলাকার মো. হাসান (৩৫), পাবনার দীঘা এলাকার আলেক (৪৫), ঈশ্বরদী উপজেলার বিলকাটিয়া গ্রামের রাকিব (২৭), রহিমপুর গ্রামের আফতাব আহমেদ (৫০), আমজাদ হোসেন (৪০), রবিন (৩৫) ও রাজিব (৪০)।

আহতরা হলেন পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার আবদুর রশিদ খাঁনের ছেলে জমিরুল ইসলাম (২৫), শুক্কুর আলী বিশ্বাসের ছেলে সুজন বিশ্বাস (৩০), মাহাবুল প্রামানিকের ছেলে মো. আশা (১৭), আটঘরিয়া উপজেলার আলাউদ্দিনের ছেলে মোঃ মাসুম (২৫), পাবনা সদর উপজেলার আবু সাঈদের ছেলে মো. মিন্টু হাসান (২৫), সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নজরুল ইসলাম সর্দারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৫), দেভাটা উপজেলার মোঃ কাউছার গাজীর ছেলে মোঃ জাকির হোসেন (২৫)।

ইয়াংছা চেক পোস্টের আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোঃ আবদুস সামাদ খাঁন জানান, ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে চেকপোস্টের কাছে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও সাত জন।

তিনি আরও বলেন, ট্রাকের ভেতরে গ্রামীণফোনের টাওয়ার নির্মাণের সরঞ্জাম ছিল। এসব সরঞ্জাম চাপা পড়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

শ্রমিক জামিরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে নারায়নগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে ১৫ জন শ্রমিক টাওয়ার নির্মাণ সামগ্রীসহ বান্দরবানের লামায় যাচ্ছিলাম। ইয়াংছা বাজারের পশ্চিম পাশে বাঁক ঘোরার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকটি খাদে পড়ে যায়।

ইয়াংছা চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা এসআই ত্রিপন চাকমা বলেন, ঘটনাস্থলে নিহত চারজনের লাশ চকরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, নিহত ৭জনের লাশ ময়না তদন্ত ও হস্তান্তরের জন্য লামা থানা পুলিশের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।