সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / ফিল্মি স্টাইলে চলতেন নূর হোসেন, নিরাপত্তায় ছিল সশস্ত্র দেহরক্ষী

ফিল্মি স্টাইলে চলতেন নূর হোসেন, নিরাপত্তায় ছিল সশস্ত্র দেহরক্ষী

নারায়ণগঞ্জ আদালতে তোলা সময়

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নূর হোসেন চলাফেরা করতেন ফিল্মি স্টাইলে। আওয়ামী লীগের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সভাপতির দায়িত্বে থাকা নূর হোসেনের নিরাপত্তায় সবসময় নিয়োজিত থাকত ১১ জন সশস্ত্র দেহরক্ষী।

গণমাধ্যম প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, নূর হোসেনের নিজের নামে দুইটি অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল, অন্যগুলোও তার অনুসারীদের নামে লাইসেন্স ছিল। মোট ১১জন সশস্ত্র দেহরক্ষী সর্বদা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। স্থানীয় থানা পুলিশ তার কথায় উঠত-বসত। নূর হোসেনের জীবন-যাপন ছিল ফিল্মি স্টাইলে।

সাত খুনের ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে গেলেও সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ। এমনকি ভারতে গ্রেফতারের পরও তার নিয়ন্ত্রণেই ছিল সবকিছু। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় দেশে ফিরিয়ে আনার পরও সিদ্ধিরগঞ্জের সব কিছুতেই ছিল নূর হোসেনের নিরবচ্ছিন্ন প্রভাব। তবে গতকাল রায় ঘোষণার পর সিদ্ধিরগঞ্জে নূর হোসেনের বাহিনীর সদস্যদের আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

নূর হোসেনের জন্ম সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল টেকপাড়া গ্রামে। এখানকার মৃত হাজী বদরউদ্দিনের ৬ ছেলের মধ্যে তৃতীয় নূর হোসেন। ইকবাল গ্রুপের ট্রাকের হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ট্রাকের চালক হন। ১৯৮৯ সালে শিমরাইল আন্তঃজেলা ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস দখল করে নেয়।

এ সময় নূর হোসেন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। ১৯৯২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলামকে পরাজিত করে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর সিদ্ধিরগঞ্জ শাসন করতে শুরু করেন নূর হোসেন ও তার বাহিনী। বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার সভাপতিও হন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ ১৩টি মামলা হয়।

১৯৯১ থেকে ২০০০ পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন নূর হোসেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় তার পরিচয় হয় হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে।

২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এলাকায় ছিলেন না। দীর্ঘ চার বছর অনুপস্থিত থাকায় ২০০৫ সালে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে। ওই সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হিসেবে নাম ওঠে তার। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়।

তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের পর এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন নূর হোসেন। ২০০৯ সালের ৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের স্বাক্ষরিত ‘অতি জরুরি’ লেখা একটি চিঠি দেওয়া হয় তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে।

আর চিঠির অনুলিপি বিতরণ করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবকেও। ওই চিঠিতে নূর হোসেন চেয়ারম্যানকে আওয়ামী লীগের এক ত্যাগী নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করে। তিনি যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারেন সেজন্য তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। এ চিঠির পরই ঘটনা মোড় নেয়।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেফতারি পরোয়ানা। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাতের জোর আপত্তিতে এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের বাধায় শেষ পর্যন্ত তাকে পৌর প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দু’টি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনও পলাতক রয়েছেন ১২ জন।

আসামিদের দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও নানা সাক্ষ্য প্রমাণের উপর দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের নভেম্বরে ১৬ জানুয়ারি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন। রায়ে নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

সূত্র:priyo.com,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওতে উৎসবমুখর ভোটগ্রহণ : নারী ভোটারদের উপস্থিতি : অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ, ইসলামপুর ও ঈদগাঁও ইউনিয়নে ব্যাপক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/