সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / বর্ষায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য বড় হুমকি মানববর্জ্য

বর্ষায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য বড় হুমকি মানববর্জ্য

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

মিয়ানমারের চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা।

এখানকার সচেতন মহল মনে করছেন, এই বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানববর্জ্য প্রতিনিয়তই হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে টয়লেট। কোনো কোনো টয়লেটে কংক্রিটের রিং ব্যবহার করা হয়েছে, কোথাও হয়নি। অনেক টয়লেট থেকে অপরিস্কার ও ময়লাযুক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ঝুঁকিতে পড়ছেন বাসিন্দারা। তবে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার তুলনায় এসব উদ্যোগ অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খোলা টয়লেটে পানিবাহিত এবং পেটের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা না করা গেলে যে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, এখন থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। পৃথিবীর প্যারাক নামে খ্যাত পাহাড় গুলি কেটে সমান করা হয়েছে। অতি বৃষ্টির ফলে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের মলমূত্র স্থানীয়দের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। পানি নিস্কাশনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা মহাদুযোগের মধ্যে আছি। কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মোরশেদ আলম বলেন, গতকাল বৃষ্টির সাথে সামান্য বাতাসে ত্রিপল দিয়ে ছাউনি রোহিঙ্গাদের কুড়ে ঘরগুলোর ওপর থেকে ত্রিপল ছিড়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।

স্বামী হারা সিতারা বেগম ও নুরে জান্নাত জানান, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে সারা রাত না ঘুমিয়ে বৃষ্টিতে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তার উপর থাকার ঘর থেকে একটু দূরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টয়লেটে গিয়ে ফিরে আসতে ভয় লাগে। টয়লেট ভরে গেছে, দূর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।

আরেক রোহিঙ্গা মাঝি আলি আকবর বলেন, এখানে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট রয়েছে। অনেক এনজিওর দেয়া নলকুপগুলো ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে। পানি আনতে মা বোনদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আর স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নাজুক। দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া বাতাসে ঘরের ছাউনি উড়ে গেলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। আমাদের নিজেদের মধ্যে একে অপরের সহযোগিতায় কোনো রকম রাত কাটায়। আমাদের সব চাইতে বেশি প্রয়োজন টেকসই থাকার ঘর আর নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা।

রোহিঙ্গা নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত বিভাগিয় কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা যতই খাদ্য দেই না কেন, স্বাস্থ্য ভালো না রাখতে পারলে বড় সমস্যা দেখা দেবে। এ জন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মুজিবুল হক বলেন, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের  বিকল্প নেই। সে হিসেবে রোহিঙ্গাদের জন্যেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করা না গেলে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ উন্মোক্ত টয়লেটের মলমূত্র থেকে পানি ও মাটি দূষিত হয়। আবার দূষিত পানি খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রোগ তৈরি করে।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের জন্য প্রতিনিয়তই শৌচাগার তৈরি করা হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবুও স্বাস্থ্যসম্মত বিষয়টি থেকেই যায়। কারণ এত বড় একটি জনগোষ্ঠির জন্য শৌচাগার তৈরি একটি চ্যালেঞ্জেরও বটে।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/water-distribution-lama-mayor-rafiq-30-4-24-1/

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর পক্ষ থেকে লামা বাজারে জনসাধারণের মাঝে নিরাপদ পানি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/