কোনো শরণার্থী ক্যাম্পে নয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতেই হবে
হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে নিপীড়ন চালানো হয়েছে তা গণহত্যা। বিশ্বব্যাপী এ ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। শুরু থেকে ওআইসি বাংলাদেশে প্রশংসিত উদ্যোগের পক্ষে। এখনও সংকট সমাধানের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে বলে জানান প্রতিনিধিদলের প্রধান হাশেম ইউছেফ।
এ সময় তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয় জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করবে ওআইসি। কক্সবাজারে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিধিদল উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। ওআইসি প্রতিনিধি দলের সাথে ৩৮ দেশের মন্ত্রী, ৮ পররাষ্ট্র সচিবসহ ৫৮ দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রয়েছেন। শুক্রবার সকালে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করেন। সকাল ১০ টার দিকে কুতুপালং পৌঁছে ডি ফাইভ ব্লকের সম্মেলন কক্ষে নির্যাতিত রোহিঙ্গা ভিকটিমদের কথা শুনেন এবং তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন।
পরে তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারাও আমাদের মুসলিম ভাই। তাদের সমস্যা সমাধানে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আমরাও আছি। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারকে ফেরত নিতেই হবে। কোনো শরণার্থী ক্যাম্পে নয়, তাদের নিজের বাড়িতেই ফিরিয়ে নিতে হবে। ওআইসি প্রতিনিধিদল জোরালো কণ্ঠে এ দাবি জানান। সংকট নিরসনে মিয়ানমার সরকারকে আর্ন্তজাতিক চাপের মধ্যে রেখেছেন বলেও জানান। পাশাপাশি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে কফিআনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আহবান জানান।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেন, রাখাইন সংকট নিয়ে আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই সহিংসতা শুরু হয়। এর জবাবে গত ২৫ আগষ্ট রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী সহিংসতা শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যাপক চাপে পড়ে সরকার। সংকট নিরসন ও সহযোগিতার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার আহবান জানিয়ে আসছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ওআইসি প্রতিনিধিদলের আজকের এই সফর। ওআইসি প্রতিনিধিদলের সব সদস্যই সংকট নিরসনের পক্ষে।
কুয়েত, মিশর সৌদি আরবসহ ওআইসি প্রতিনিধিদলের নেতৃবৃন্দ সবাই অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভূয়সী প্রশংসা করেন। শরণার্থী সংকটের ইতি টানতে বিশ্বশক্তিকে অবশ্যই মিয়ানমারের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তারা। ওআইসির প্রতিনিধিদল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কফিআনান কমিশনের সুপারিশ মিয়ানমার সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করি।
কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্খী প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, একসাথে এতোগুলো দেশের প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আসা এ সময়ে বাংলাদেশের বড় ধরনের অর্জন। এদিকে শনিবার ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৫ তম সম্মেলন শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এবারের ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হল; টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের জন্য ইসলামী মূল্যবোধ। সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে ছিলেন। রোহিঙ্গা ক্যম্প পরিদর্শনে আসা ৮ জন মন্ত্রী, ৩ জন প্রতিমন্ত্রী, ৮ জন পররাষ্ট্রসচিব সহ ৫৮ দেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এসে রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে প্রথমে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের অবস্থা সরেজমিন ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কথা বলেন।
You must be logged in to post a comment.