দীপক শর্মা; কক্সভিউ :
রোহিঙ্গা সমস্যাকে অনেক ‘জটিল’ বিষয় আখ্যায়িত করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটি বলছে ‘এ সমস্যার কোনো সহজ সমাধান নেই’।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ওই প্রতিনিধি দলের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, এটা খুবই জটিল বিষয়। নিরাপত্তা পরিষদে (এই বিষয়ের ওপর) আমরা একসাথে কাজ করে যাচ্ছি।
জাতিসংঘের ওই প্রতিনিধি দলটি স্বীকার করেছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা ও সংকট উভয় মিয়ানমারেই রয়েছে। তাদের ওপর অত্যাচার এবং নির্যাতনের কারণেই তারা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম বলেন, আগুন লাগানো খুব সহজ কিন্তু নেভানো অনেক কঠিন।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি যে, এই সমস্যার সমাধান অনেক কঠিন। এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও এই সমস্যার গভীরতা বুঝতে পেরেছেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরির্শনকালে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে তারা বুঝতে পেরেছেন যে, এই সমস্যার উৎপত্তি এবং সমাধান উভয়ই মিয়ানমারে রয়েছে।
উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটির ক্যাম্প পরদর্শনকালে অনেককেই প্ল্যাকার্ড ধরে থাকতে দেখা যায়। ওই সব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলে ‘আমরা ন্যায় বিচার চাই, জাতিংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদের স্বাগতম, আমরা রোহিঙ্গা, বাঙালি নই (নট বাঙালি, ইয়েস রোহিঙ্গা)।
এর আগে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি কুতুপালং এর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ক্যাম্পে অবস্থিতদের কাছে রাখাইনের নৃশংসতার কথা শুনেন।
এছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের সাথেও কথা বলেছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
কুতুপালং পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলটি সাংবাদিকদের জানান, তারা এপাশের (বাংলাদেশ) সমস্যা প্রত্যক্ষ করেছেন। পরবর্তীতে ওই পাশের (মিয়ানমার) সমস্যা প্রত্যক্ষ করার পর চূড়ান্ত মতামত জানাবেন।
তবে রোহিঙ্গাদের নিরপদে এবং মর্যাদার সাথে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমও ওই প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলেন।
এর আগে দশকের পর দশক ধরে চলমান থাকা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রতিনিধি দলকে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরকে ঐতিহাসিক সফর বলে টুইট করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো।
রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপকালে প্রতিনিধি দলটি তাদের আশ্বস্ত করেন যে, এ সমস্যার সমাধানে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এপ্রিল মাসের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ আমেরিকান দেশ পেরুর গুস্তাভো মেজা-চুয়াদার নেতৃত্বে শনিবার সকালে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছে।
এদিকে এই প্রতিনিধি দলের সফরকে সামনে রেখে তাদেরকে নথিপত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সম্যার সমাধানে বিতর্কহীন এবং সন্দেহাতিত প্রমাণ সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক আলী রীয়াজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘অবশ্যই এই শরণার্থীরাই নিপীড়ন ও জাতিগত নিধনের বিতর্কহীনপ্রমাণ, কিন্তু তারপরও এটাই সব কিছু না।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘেরও বোঝা উচিত এখানে ঝুঁকি রয়েছে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মোকাবেলায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। এটি অসন্তোষজনক এবং আর কোনোভাবে অব্যাহত থাকতে পারে না।
অধ্যাপক রীয়াজ আশা প্রকাশ করে বলেন, নিষ্ক্রিয়তার পালা এবার শেষ হবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তা দেখতে এবং বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে শনিবার কক্সবাজার পৌঁছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল।
রবিবার দিনব্যাপী কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বিকালেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে প্রতিনিধি দলটি।
সূচি অনুযায়ী, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং সাড়ে ১০টায় মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে স্থায়ী পাঁচটি হলো- চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। বাকি ১০টি দেশ অস্থায়ী সদস্য।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
You must be logged in to post a comment.