মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর দেশটির সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে তুরস্ক। সর্বশেষ ত্রাণ সরবরাহের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুরবস্থা সরেজমিন দেখে গেছেন তুর্কি ফার্স্ট লেডি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্ক বরাবরই সোচ্চার। কিন্তু কেন? ইতিহাস বলছে, আজ থেকে শতবর্ষ আগে অত্যাচারিত ও বিপদগ্রস্ত উসমানী খিলাফতভুক্ত তুর্কি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ।
শনিবার তুরস্কের সংবাদসংস্থা আনাদোলু’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ফিকরি ইশিক শুক্রবার এই দাবির স্বপক্ষে একটি দলিলও উপস্থাপন করেছেন। সংগ্রহশালায় থাকা ওই দলিলটিতে উসমানীদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একাত্মতার ঘোষণা রয়েছে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯১৩ সালে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধের সময় তুর্কিদের পাশে দাঁড়িয়েছিল রোহিঙ্গা মুসলিমরা। যুদ্ধাহত, অনাথ, বিধবা ও শহীদদের পরিবারদের জন্য রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ সেই সময়েই ত্রাণ হিসেবে ১ হাজার ৩৯১ পাউন্ড সাহায্য পাঠায়।
সেসময় ইয়াঙ্গুন (বর্তমান রেঙ্গুন) থেকে অর্থের সঙ্গে উসমানী খিলাফতের উজির বরাবর একটি পত্রও পাঠানো হয়। উসমানী ত্রাণ তহবিল নামের ওই সংগঠনের প্রধান হিসেবে আহমেদ মওলা দাউদ নামের এক ব্যক্তি চিঠিতে যুদ্ধ জয়ের জন্য উসমানী খিলাফতকে শুভেচ্ছা জানান।
পত্রে দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধে বুলগেরিয়ার পরাজয় স্বীকারের ফলে সার্বিয়া, গ্রিস, মন্টেনিগ্রো, রুমানিয়া এবং উসমানী খিলাফত তাদের হারানো ভূমি ফিরে পাবে বলে অভিনন্দন জানান দাউদ। যুদ্ধ পরবর্তী এই সময়ে সামান্য হলেও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পাঠানো ওই অর্থ তুর্কি জনগণের কিছুটা হলেও উপকার হবে বলে দাউদ আশা প্রকাশ করেন।
যুদ্ধজয়ের কারণে উসমানী খিলাফতের অধীনে আদ্রিয়ানোপল পুনরায় ফিরে আসায় কনস্টান্টিনোপল থেকে ইউরোপের যোগাযোগও পুনরায় স্থাপিত হবে বলে জানান রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সংগ্রাহক দলের ওই নেতা।
চিঠির কথা তুলে ধরে উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, উসমানী খিলাফতের পররাষ্ট্র দপ্তরও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসায় দাউদকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এরা সেই রোহিঙ্গা মুসলিম, যাদের প্রতি আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। অতীতে কঠিন সময়ে যারা আমাদের যুদ্ধাহত, অনাথ, বিধবা ও শহীদ পরিবারদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল।’
জাতিসংঘের ভাষায় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নিপীড়িত জাতি হিসেবে বিবেচিত এই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হাতে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ২০১২ সাল থেকে এর মাত্রা ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার বাহিনীর অবরোধের মুখে গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশনে হামলা ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
এরপর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অভিযানে হেলিকপ্টার গানশিপেরও ব্যাপক ব্যবহার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সীমান্তে পুঁতে রাখা হয় স্থলমাইন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা এবং নারীদের গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি বয়োবৃদ্ধ নারী এবং শিশুরাও। প্রাণ বাঁচাতে স্রোতের বেগে তারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে।
জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এর মুখপাত্র ভিভিয়ান জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত কয়েকদিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
সূত্র:deshebideshe.com,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.