‘বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ বহুল প্রচলিত প্রবাদটি চুরমার করে দিচ্ছে লোভাতুর মানুষরুপী কতিপয় ব্যক্তি। বনে বন নেই, প্রায় উজাড় হয়ে গেছে গাছগাছালি। ফলে পাহাড়ে বিলুপ্তের পথে বন্যপ্রাণী। অল্প যে ক’টি প্রাণী রয়েছে সেগুলোও অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। ভুগছে চরম খাদ্য সংকটে। আবাসস্থলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছেই। তাই খাদ্যের সন্ধানে প্রায়শই লোকালয়ে ডুকে পড়ছে বন্যপ্রাণী। জীবন তুচ্ছ করে অল্প খাবারের আশায় এবার শাবকসহ মা বন্যহাতি পাহাড় থেকে অবিশ্বাস্য দূরত্বে উপকূলের জনপদে প্রবেশ করেছে।
শনিবার ভোরে বাচ্চাসহ মা হাতিটি’র দেখা মেলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় পূর্ব বড় ভেওলার কদ্দাচোরাস্থ ফসলি জমিতে। এসময় কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে হাতি আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর স্থানীয় মানুষ সাহস ফিরে পায় এবং হাতি তাড়াতে সহায়তা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিপূর্বে বন্য হাতি পাহাড়ি ঝিরি এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে খাদ্য সংগ্রহে হানা দিলেও ঘন লোকালয়ে প্রবেশ করেনি কোন সময়। এবার পাহাড়ের নিকটবর্তীতো নয়ই বনাঞ্চল থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরের পূর্ব ভেওলার ফসলি জমিতে বাচ্চাসহ মা হাতি হানা দেয়ার দৃশ্যটি যারা দেখননি তারা শুনে বিশ্বাসও করছেন না।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকালে পূর্ব বড় ভেওলার ধানি জমিতে শাবকসহ মা হাতিটি পাকা ধানসহ সবজি ও কলাগাছ খাচ্ছিল। দূর থেকে লোকজন নিজেদের ক্ষেত রক্ষা করতে নানা কৌশল অবলম্বন করলেও ব্যর্থ হয়। ফলে খবরটি পৌছানো হয় উপজেলা প্রশাসনে। এতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম ও চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ফরেষ্টার প্রাণী বিশেষজ্ঞ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী। তারা স্থানীয় জনতার সহায়তায় শাবকসহ মা হাতিটিকে নিকটবর্তী বরইতলীর বনাঞ্চলের দিকে খেদানোর (তাড়ানোর) চেষ্টা করে বিকালে সফল হন। তবে, ওই হাতি দুটি বনাঞ্চলে গেলেও সন্ধ্যায় বরইতলীর পূর্ব পাশের লোকালয়ে ফের বের হলে ওই এলাকার লোকজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতংক।
ভেওলা থেকে হাতি তাড়ানোর সময় কথা হয় কৃষক হুমায়ুনের সাথে। তিনি বলেন, সকালে ক্ষেতে গিয়ে দেখি দুটি হাতি সবজি ক্ষেতে অবস্থান করছে। তখন ভয়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসি। এলাকায় হাতি আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাতি দেখতে লোকজন ভিড় জমাতে থাকে। বাদল নামের এক কৃষকের মরিচ ক্ষেত ছাড়াও নষ্ট করে ধান ও সবজি ক্ষেত।
চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বনে খাদ্য সংকটের কারণে এই হাতি দুটি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। কোন বনাঞ্চল থেকে বা কত দূর থেকে শাবকসহ মা বন্যহাতিটি এসেছে তা বুঝতে পারছি না। তবে এই হাতি পেট ভরে খাবার পেলে মানুষের কোন ক্ষতি করবে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও জানমাল রক্ষাসহ মানুষকে আতংক মুক্ত রাখতে বনাঞ্চলে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে হাতি দুটিকে।
You must be logged in to post a comment.