অনলাইন ডেস্ক :
সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে দেখা দিয়েছে মাঙ্কি পক্স (Monkey Pox) নামের এক ধরনের বিপজ্জনক বসন্ত রোগের। ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মাঙ্কি ভাইরাস। শুধু ইউরোপ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এবার ইংল্যান্ডের ছাড়াও স্পেন ও পর্তুগালের মতো একাধিক দেশে মিলেছে মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত রোগীর হদিস।
একই রকমের উপসর্গ দেখা দেয়ায় পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে আরও বেশ কিছু ব্যক্তিকে। কিন্তু কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা।
কী এই মাঙ্কি পক্স? মাঙ্কি পক্স খুবই বিরল এবং মৃদু সংক্রামক ধরনের ভাইরাস কেন্দ্রিক রোগ। সিডিসির তথ্য অনুসারে- মাঙ্কি পক্স প্রথম আবিষ্কার করা হয় ১৯৫৮ সালে। গবেষণা করার কাজে ব্যবহৃত বাঁদরদের মধ্যে স্মলপক্স জাতীয় রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই নামকরণ হয় মাঙ্কি পক্স। কঙ্গোতে ১৯৭০ সালে এই রোগ ছড়ায়। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে, গায়ে র্যাশ হয়। তবে এই র্যাশের শুরু হয় মুখ থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এক বিশেষ ধরনের বসন্ত রোগ। জলবসন্ত বা গুটিবসন্তের প্রতিকার থাকলেও বিরল এ রোগটি নিরাময়ে এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি জানা নেই চিকিৎসকদের। মূলত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার কিছু দেশে এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে নাম ‘মাঙ্কি পক্স’ হলেও একাধিক বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ ভাইরাস।
মাংকি পক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে- জ্বর, পিঠ, মাথাব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট এবং মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ। দেখা দিতে পারে কাঁপুনি ও ক্লান্তিও। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগীর দেহে চুলকানি হয়। সঙ্গে ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে থাকে শরীরে। হাম, বসন্ত, স্কার্ভি এবং সিফিলিসের কিছু কিছু লক্ষণের সঙ্গে এ রোগের উপসর্গগুলোর কিছুটা মিল পাওয়া যায়। তাই অনেকেই এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো চিনতে ভুল করেন। এরপর দেহের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। সঙ্গে ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে থাকে মুখে। ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেই ক্ষত। ভাইরাসটি সংক্রামক হওয়া সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। গুটি বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়।
এতদিন চিকিৎসকদের ধারণা ছিল ‘ড্রপলেট’-এর মাধ্যমেই ছড়ায় এ রোগ। তাই বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, শ্বাসনালি, ক্ষত স্থান, নাক, মুখ কিংবা চোখের মাধ্যমে এ ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে সুস্থ ব্যক্তির দেহে। কিন্তু নতুন আক্রান্তদের পরীক্ষা করে চিকিৎসকদের আশঙ্কা, যৌন মিলনের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে মাঙ্কি ভাইরাস। সেই মর্মে হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে।
মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত কারও সঙ্গে যৌন মিলন হলে তার সঙ্গীও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে বলেই প্রাথমিক অনুমান বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
এই রোগের তেমন কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এই রোগে আক্রান্তদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত যাতে অন্য কারও মাঝে ছড়াতে না পারে।
You must be logged in to post a comment.