-: মোঃ আরিফ ঊল্লাহ :-
বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ছাড়া দৈনন্দিন জীবন যেন বেমানান, এটি আমাদের জীবনের একটি অবধারিত অংশে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোন এখন আর কথা বলা ও ক্ষুদে বার্তা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়না বরং এর মাধ্যমে আমরা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক মেইল, ভিডিও কলে কথা বলা, বিভিন্ন প্রকার আবেদন পত্র লেখাসহ অফিসের যাবতীয় কাজও করতে পারি এবং নানাবিধ সফটওয়ার ও অ্যাপসের মাধ্যমে আমরা জটিল থেকে জটিলতর কাজ খুবই সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে করতে পারছি।
ইংরেজী Mobile Phone (মোবাইল ফোন) শব্দটি তুর্কি শব্দ cep-telefonu থেকে আগত, এর অর্থ তার বিহীন টেলিফোন। আর মোবাইল অর্থ হলো স্থানান্তর করা যায় এমন বা ভ্রাম্যমাণ। যেহেতু এই ফোনটি খুব সহজে আমরা বহন করতে পারি বা স্থানান্তর করতে পারি তাই এর নাম মোবাইল ফোন। বৈশিষ্ট অনুসারে মোবাইল ফোনকে আমরা ২ভাগে ভাগ করতে পারি। যে ফোন দিয়ে আমরা শুধুমাত্র কথা বলি, ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করি, সাধারণ হিসাব নিকাশ করে থাকি তা আমাদের নিকট সাধারণ মোবাইল ফোন হিসেবে পরিচিত। আবার যেসকল ফোনের মাধ্যমে আমরা ভিডিও কল করতে পারি, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি, ইলেকট্রনিক মেইল করতে পারি তাকে আমরা স্মার্টফোন বলি। এই বিস্ময়কর উদ্ভাবনটি আমাদের জীবনকে আরো সহজ ও গতিময় করে তুলেছে কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকও আছে যা আমাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতে পারে এবং এই মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর তা নির্ভর করে আমাদের ব্যবহারের উপর, আমরা যদি এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটি আমাদের জন্য উপকারী অন্যথায় জীবন নাশের জন্য এটিই যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি মোবাইল ফোনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে, কারণ আমরা দিনের বেশির ভাগ সময়ই স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকি আর ‘এনভায়রোমেন্টাল হেলথ পারসপেকটিভ’ এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে অন্ধকার বাস্ট্রীট লাইটের নিচে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপ ব্যবহার করলে এর নীল আলোর ফলে হতে পারে ব্রেস্টক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যান্সারসহ আরো বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার। এছাড়া আমরা যখন একনাগারে ১৫মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে কথা বলা চালিয়ে যাই তখন আমাদের মাথার তাপমাত্রা ২ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়ে ১০৩ ডিগ্রী ফারেন হাইট হয় আর কথা বলা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই তাপমাত্রা ও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়।
শুধু তাই নয় আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি তখনো সময়ের সাথে সাথে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে হাত পুড়ে যাওয়া, ব্যাটারি ডাউন হয়ে যাওয়া, মোবাইল ফোন বিস্ফরণের ঘটনা গুলি আমাদের কানে আসে। এবার যদি বলি আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা তাহলে এটা আরো হতাশাজনক কারণ বর্তমান সময়ে কিশোর ও যুব সমাজের অধঃপতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কারণ এখন যুবকদের মাঠে কম ফেসবুকে বেশি দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে নয় ম্যাসেঞ্জারে পরিলক্ষিত হয়, এই আসক্তি থেকে কোনো ক্রমেই যেন আমরা রক্ষা পাচ্ছিনা, লাইক, কমেন্ট পাওয়ার জন্য হরেক রকম সেলফি ও ছবি তলায় ব্যস্থ আজকালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা, এর ফলে মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে ভূডিভূডি, রাস্তা পাড় হওয়া, ক্লাস চলাকালে শ্রেণীকক্ষে, রাতে ঘুম হারাম করে ফেসবুক, ইমো আর টুইটারে চেটিং করে আমরা জীবণের মূল্যবান সময়কে অযথা নষ্ট করেই চলেছি, এখানেই কি শেষ???
না, উপাসনালয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার, রোগির সাথে সেলফি, মৃতদেহর সাথে সেলফি তোলার মধ্য দিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করছি যে আমরা কতোখানি মানসিক রোগে ভুগছি, আর এই রোগটিকে বলা হয় ‘ফেসবুক অ্যাদিকশন ডিসঅর্ডার বা ফ্যাড। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কিছু সচেতনতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেমন, আমরা দীর্ঘ সময় কথা বলার ক্ষেত্রে ল্যান্ডফোন বা হেড ফোন ব্যবহারকরা, মোবাইল ফোনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা আর ব্যবহার না করা, ১৫মিনিটের বেশী একটা না মোবাইল ব্যবহার না করা। অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার না করা, বিনা প্রয়োজনে ছবি না তুলা, অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার সীমিত করা। কিশোর–কিশোরীদের খেলাধুলা মুখী করা, পিতা, মাতাকে আরো যত্নশীল হওয়া ও ধর্মীয় ও মনুষত্ব বোধ বৃদ্ধি করতে পারলেই আমরা সুন্দর এক সোনালি বাংলাদেশর স্বপ্ন দেখতে পারবো।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী, কক্সবাজার জেলা জজ আদালত।
Email: arifcbiu@gmail.com
You must be logged in to post a comment.