সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / আধুনিকতার উত্কর্ষতায় বিলুপ্ত প্রায় ছনের ঘর

আধুনিকতার উত্কর্ষতায় বিলুপ্ত প্রায় ছনের ঘর

Sagor File-1 (19-1-2016) f1এম আবুহেনা সাগর; ঈদগাঁও:
আধুনিকতার উত্কর্ষতায় বর্তমান ডিজিটাল যুগে ছনের তৈরি ঘর বিলুপ্ত প্রায়। বেশ কয়েক বছর পূর্বেও কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের আনাচে কানাচে হলেও দুই চারটি ছনের ঘর চোখে পড়ত বর্তমানে কয়েকটি ওয়ার্ড মিলেও সবুজ পাহাড়ে ধূসর রঙের ছনের চালার ঘর এখন আর তেমনটা চোখে পড়ে না। রোদে চিকচিক করা রূপালি ঢেউটিনের চাল বহুদূর থেকেই জানান দেয় তার অস্তিত্বের কথা। সবুজের ফাঁকে খেলা করে সাদার ঝিকিমিকি। আর হাজার বছরের পরম বন্ধু অভিমানি ‘ছন’ নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে চলেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, কম দামে ঢেউটিন পাওয়া যায় বলে বৃহত্তর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের সর্বত্রই দিন দিন টিনের ঘর বাড়ছে। ফলে নতুন করে ছনের ঘর খুব কম হচ্ছে। তাই গ্রাম থেকে শহর কোথাও আর আগের মত ছনের চাষও হচ্ছে না। এমন চিত্র শুধুমাত্র ঈদগাঁও নয় পর্যটন শহর কক্সবাজারের নানা উপজেলাগুলোতেই দেখা যাচ্ছে। এদিকে টিনের অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে সে ছন গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে। তবে জেলা সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পূর্বের ন্যায় সেই ছনের ঘর তেমনি আর চোখে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে ছনের চাষ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা দু’বয়োবৃদ্ধ জানান, গ্রামের ঘরবাড়িতে ছাউনি হিসাবে ছনের ব্যবহার এক সময় খুব বেশি ছিল। এখন সেটির পরিবর্তে ছাউনি হিসেবে টিনের কদর বেড়েছে। যার ফলে আমরা অসহায়ত্ব বরণ করছি। গ্রামীণ জনপদের লোকেরা জ্বালানি এবং গরুমহিষের খাদ্য হিসাবে ছন ব্যবহার করত। কিন্তু কালক্রমে গরীবের ছাউনি সেই ছন হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ছনের উত্পাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড়ের জঙ্গল পরিষ্কার করে মাটিকে হালকা খুঁড়ে দিলে ভাল ছন হয়। একই পাহাড়ে ফলদ ও বনজ গাছের পাশাপাশি ছনও হয়। বিভিন্ন কারণে পাহাড় ধ্বংসের কারণে এবং রীতিমত পাহাড় পরিষ্কার না করার কারণে পাহাড়ের ছন বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। পর পর দু’বার ছন না কাটলে সেই পাহাড়ে আর ছন হয় না। প্রতি বছর ছন কাটলে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিলে ছনের ভালো উত্পাদন হয়। উচ্চবিত্তরাও শখের বসে পাকা ঘরের চিলে কোটায় ছন ব্যবহার করতো।
ঈদগাঁওয়ের কালিরছড়ার বেশ ক’জন ব্যক্তির মতে, সবখানে টিনের ঘর থাকলেও কিছু কিছু গ্রামের অসহায় পরিবার এখনো তাদের মাটির ঘরের সাথে ছন ধরে রেখেছে। তারা পূর্বের লোকজনের মত রেখে যাওয়া ছনের ছাউনির ঘরে থাকেন এখনো। তবে তাদের মতে, শীত ও গরম উভয় মওসুমে আরামদায়ক ছনের ছাউনির ঘর। ছনের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য বেশ কিছু কারিগর ছিল। এখন তাও হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলা থেকে। বিশেষ কায়দায় ছনকে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ছাউনি দেয়া হতো। ছাউনির উপরে বাঁশ ও বেত দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে পানি ছিটানো হতো। যাতে করে সহজে ছনগুলো বাঁশের উপর বসে যায়। এক সময়ের ছন চাষী এক ব্যক্তির মতে, কমশ্রমে বেশিলাভ থাকলেও এখন আর ছন চাষে আগ্রহী না চাষীরা। কারণ আধুনিকায়নের সাথে সাথে এখন ছনের চাহিদা কমে গেছে। কারণ মানুষ এখন আর বাঁশ ও ছন দিয়ে ঘর তৈরি করতে চায় না। বাঁশ ও ছন দিয়ে তৈরি ঘরগুলো বেশি দিন টেকসইও হয় না। যার কারণে ছনের চেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে এখন টিনের। তাই ছনের ঘর দখল করে নিয়েছে টিনের ঘরে। গ্রাম থেকে শহরের প্রায় প্রতিটি এলাকাজুড়ে দেখা মিলে ছনের পরিবর্তে ছোট বড় অসংখ্য টিনের ঘর। হারিয়ে যাচ্ছে তাই ছনের ব্যবহার। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ এখন পাকা-আধাপাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করছে টিনকে। আর তার স্থলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলা থেকে সে ছনের।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/