সাম্প্রতিক....

ছিন্ন

-: সীমা চৌধুরী :-

সাহেদের সাথে আজ নীলার ডিভোর্স হবে। সেটার জন্য নীলা আর তার পাঁচ বছরের মেয়ে ঐশি আর নীলা তৈরি হয়ে নিচ্ছে কোর্টে যাওয়ার জন্য। নীলা তৈরি হয়ে মেয়েকে নিয়ে দশ মিনিটের রাস্তা পায়ে হেঁটে একটা অটোতে উঠে। অটো গাড়ি হলে দশ টাকা ভাড়া আর রিকসায় হলে ২০ টাকা। নীলা অটোতে উঠল দশ টাকা বাঁচাতে। কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স হবে তাই সেখানে যেতে দুটো গাড়ি পাল্টাতে হয়। অটো গাড়ি করে তিন মিনিট লাগে বাস যেখানে দাঁড়ায় সেখানে যেতে, পায়ে হেঁটে গেলে ২০ মিনিট তার ও বেশি সময় লাগতে পারে, সেটা যে যেমন হাঁটতে পারে তার উপর ডিপেন্ড করে। যেখান থেকে নীলা বাসে উঠবে সেখানে এসে অটো থামল, দশ টাকা ভাড়া দিয়ে অটো থেকে নেমে গেল নীলা। বাসে উঠল মেয়েকে নিয়ে। নীলার মুখে আজ হাসি নেই আছে শুধু চাপা কষ্ট। হাসিটা সেদিন চলে গেছে যেদিন সাহেদের সাথে নীলার বিয়ে হয়েছে। মিথ্যা একটা সম্পর্ক আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। বাস থেকে চারিদিকের জিনিসগুলো পাথরের মত বসে দেখছে, কোনো নড়াছড়া নেই। বাসে যাত্রীদের কথাগুলোও আজ বিরক্ত লাগছে। নীলার মেয়ের কথাগুলোও যেন আজ অসহ্য লাগছে। কেন আজ এত অস্থির লাগছে, সেই নিজেই জানে না। সাহেদের সাথে দুই বছরের প্রেম, দীর্ঘ আট বছরের বিবাহিত জীবন। দশ বছর পর এসেও একজন আরেকজনকে অসহ্য লাগে। এতদিন ওদের মধ্য দৈনিক ডিভোর্সের কথা হতো আজ তা বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। হয়ত এতদিন রাগের বশে, কখনো মজার করে বলত দুজন দুজনকে। তা কখনো সত্যি হবে ভাবতে পারে নি।

ড্রাইভার ভাড়ার জন্য ও বৌদী! ও বৌদী! বলে কয়েকবার ডাকল কিন্তু মনটা অন্যমনস্ক হওয়াতে শুনতে পায়নি। কি ভাবছেন বৌদী? এতবার ডাকলাম, শুনতে পারলেন না। নীলা মৃদু একটা হাসি দিল। নীলা এর কোনো উত্তর দিল না চুপ করে থাকল, কথা বলতেও মন চাইছে না। ভাড়া দিয়ে দিল নীলা।

ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নীলা নিজেই নিল। তাই নীলা মা বাবাকে জানায়নি। ওদের এই ঝামেলায় জড়াতে দিতে চাই না। ডিভোর্স দিয়ে মেয়েকে নিয়ে অনেক দুরে চলে যাবে এই শহর ছেড়ে অনেক দুরে………………….।

যদিও সাহেদ ওদের ঘরের সবাইকে জানিয়েছে আমাকে ডিভোর্স দেবে সে কথা। হয়ত সে কথা শুনে সাহেদের পরিবার অনেক খুশি সেটা নীলার চেয়ে আর কেউ ভালো জানে না। আজ হয়ত সাহেদের মা-বাবা সে খুশিতে উকিল সাহেব আর পাড়া প্রতিবেশিকে মিষ্টি বিলি করবে। আর সাহেদ নীলাকে প্রতিনিয়ত বলত একশত লিটার দুধ দিয়ে গোসল করবে যেদিন ডিভোর্স হবে নীলার সাথে। গাড়ি এসে থামল কোর্টের সামনে। মেয়েকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল নীলা। মা বাবা পচা! বাবা ভালো না! বাবার সাথে কথা বলব না, ঐশি একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল। হে মা কথা বলবে না, একথা বলে নীলা দীর্ঘ এক নি:শ্বাস ফেলল। চারিদিকে তাকাতে লাগল নীলা সাহেদকে কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা। আর এই কোর্টের ছোট একটা রাস্তায় দুইপাশে মানুষ আর গাড়ির কারনে হেঁটে যাওয়ার ফাঁকা রাস্তা নেই। দুপাশে মানুষের হাঁটার রাস্তা তার মধ্য বিভিন্ন দোকানপাট। খেলনার দোকান, শুটকির দোকান, লুঙ্গির দোকান, চায়ের দোকান আরো কতকিছু, আবার রয়েছে সিএনজি ও কার পার্কিং করা এই ছোট জায়গায় আর মাঝখানে গাড়ি আসা-যাওয়ার রাস্তা। গা ঘেঁষে যেতে হয়। আর কোর্টের মধ্যে এমনেও মানুষের ভীড় বেশি, অনেকে অনেক ধরনের মামলা মোকাদ্দমা নিয়ে আসে। নীলা ফোনটা বের করে দেখল সাহেদের ছয়টা কল। মোবাইল সাইলেন্ট ছিল তাই শুনতে পাইনি। সাহেদকে কল দিল নীলা, তুমি কোথায়? আমি কোর্টের সামনে আছি, তুমি আস। কত সহজে বলে দিল।

নীলা মানুষের ভীড়ের মধ্য দিয়ে কোনোমতে সামনের দিকে এগুলো। সাহেদকে দেখতে পেল। উকিল নীলার পূর্ব পরিচিত ফোন নাম্বারও ছিল। কল দিয়ে উনি কোন চেম্বারে বসে জেনে নিল। সাহেদের সাথে সাহেদের মা-বাবা ও ভাই এল। নীলা এবার বুঝে গেল সাহেদ ও নীলাকে চাই না, ওসব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। মেয়ের দিকে এগিয়ে এল সাহেদ কিন্তু নীলা মেয়েকে ধরতে দিল না। সাহেদের মা-বাবার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ওরা খুব খুশি ছেলে কিভাবে এতদিনে ভাল একটা সিদ্ধান্ত নিল হয়ত সেটাই ভাবছে।

মা দিদি পঁচা ভাত দেয়! পঁচা বিস্কুট দেয়! মাছ দেয় না! ওরা পঁচা, ওরা খারাপ! এমনটাই হয়েছে ঐশির সাথে তাই একথা গুলো বলছে। দিদি বলতে সাহেদের মায়ের কথা বলছে। যখন নীলা দূরে কোথাও যেত তখন মেয়েকে রেখে যেত শাশুড়ির কাছে। তখন এধরনের খাবার দিত ঐশিকে। আর নীলা আসলে নীলাকে এসব কথা বলত ঐশি। নীলার চোখে জল চলে আসল মেয়ের কথাগুলো শুনে। নীলা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল যদিও লিফট আছে। সেখানে মানুষের ভীড় দেখে সিঁড়ি দিয়ে উঠল। পিছনে সাহেদের মা-বাবা ও ভাই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠল। পাঁচতলায় অ‍্যাডভোকেট মোঃ আলাউদ্দিনের সাহেবের চেম্বার সেখানে আসলাম। উনি বসা আছে চেয়ারে, সাথে উনার ভাই। একসাথে বসে দুই ভাই এক চেম্বারে। ওনার মেয়েও বসে কিন্তু মেয়ের বিয়ে হওয়াতে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে তাই আসেনা।

কি ব্যাপার নীলা তুমি? কেমন আছ? হঠাৎ কল দিলে কোনো সমস্যা হয়েছে। ভাল স্যার, আমি আমার হাসবেন্ডকে ডিভোর্স দিতে এসেছি। কেন কি হয়েছে? এর মধ্যে সাহেদ, সাহেদের মা-বাবা ও ভাই চলে আসল। ওদের আগে আমি চলে এসেছি। ওরা কারা তোমার লোক? আমার হাসবেন্ড, শ্বশুর-শাশুড়ি, আর সাহেদের ভাই। ওদের চেয়ারে বসার জন্য বলল উকিল সাহেব। আচ্ছা ডিভোর্সটা কিসের জন্য একটু বলবে নীলা। তোমার ত কি সুন্দর একটা বাচ্চা আছে, মেয়েরা হয় জান্নাত, ঘর আলোকিত করে। তোমরা হয়ত দুজন দুদিকে চলে যাবে, মাঝখানে মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। স্যার আমি মেয়েকে আমার কাছে রাখব। নিজে চাকরি করে মেয়েকে মানুষ করব। সাহেদ বলে উঠল মেয়েকে আমি নিয়ে যাব। নীলা বলে উঠল আমি মেয়েকে কাউকে দেব না। আচ্ছা ঠিক আছে ডিভোর্সটা কিসের জন্য একটু বলবে? স্যার বিগত সাত/আট মাস হলো ঠিকভাবে আমাকে টাকা পয়সা দেয় না। কি খেয়েছি, কি খায়নি তার কোনো খবর নেই না নিজেই নিজের মত করে চলে। নিজের বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালায় এভাবে কতদিন বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলা যায়। সাহেদ বলে প্রতিদিন ডাল আর শাক দিয়ে ভাত খেতাম। প্রতিদিন কি স্যার ডাল আর শাক দিয়ে ভাত খাওয়া যায়। ব্যাংক থেকে কিস্তি নিয়ে ভাইদের গাড়ি কিনে দেয়, দোকান কিনে দেয়। ঘরে যে ওর বউ বাচ্চা আছে তার কোনো খেয়াল নেই। সাহেদ বলল নীলা আমার পরিবারের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, ও নিজের সেচ্ছায় ডিভোর্স দিতে চাই আমার কোনো অভিযোগ নেই। এমন সময় একটা মক্কেল চলে আসে। ওর জায়গার বিষয়ে মামলা হয়েছে আজ রায় দেবে। তাই আলাউদ্দিন সাহেব আমাদের ঘন্টাখানেক বসতে বলল ওনার চেম্বারে। আমি এসে তোমাদের বিষয়টা দেখছি। তোমরা কি বসতে পারবে? নাকি কোথাও থেকে ঘুরে আসবে? আমি জানালাম পারব। ওনাদের হাজিরা আছে হাজিরা দিতে হবে, সেই মক্কেলকে নিয়ে চলে গেল।

সাহেদের মা-বাবা ও বড় ভাই নাস্তা খেতে দোকানে যাবে, সাহেদকে ডাকছে সাহেদ গেল না বসে আছে, ওরা চলে গেল। সাহেদ মেয়েকে ডাকল, নীলা মেয়েকে হাত ধরে টেনে ধরল সাহেদের কাছে না যাওয়ার জন্য। মা বাবার কাছে যাব না? বাবা খারাপ! বাবা পঁচা! বাবা কিছু খেতে দেয় না। সাহেদ বলল ঐশিকে এগুলো শিখিয়েছ? মিথ্যা তো কিছু শিখায় নি। নীলাকে জিজ্ঞেস করল কি খাবে, নীলা বলল লজ্জা করে না, এত কিছুর পর কি খাবে? জিজ্ঞেস করছে। যাও বাসায় চলে যাও, কিছু খেয়ে। আমি কিছু খাব না, তুমি খাও সবাইকে নিয়ে যাদেরকে নিয়ে সব সময় খাও। তুমি কি সত্যি সত্যি ডিভোর্স দিতে চলে আসছ? ডিভোর্স দেওয়ার মতই ত কাজ করেছ প্রতিনিয়ত। জীবনটা আজ এমন পর্যায়ে চলে গেছে এই ডিভোর্স এ সব থেকে বড় সমাধান সুন্দরভাবে বাঁচার। প্রতিনিয়ত বেঁচে আছি জীবিত হয়েও মৃতের মত, একটা জীবন্ত লাশ। নিজের বউয়ের চেয়ে তোমার কাছে প্রিয় অন্য নারীরা, নিজের সন্তানের চেয়ে প্রিয় অন্যের সন্তান। ওদের নিয়ে থাক, ওদের নিয়ে সংসার কর। ঐশি উকিল সাহেবের চেয়ারে গিয়ে বসল। কলম নিয়ে টেবিলে লেখালেখি শুরু করে দিছে। টেনে আনলেও আসছে না। খুব দুষ্টু ঐশি, কোথাও নিয়ে গেলে এমন দুষ্টুমি করতে থাকে। এমন সময় উকিলের কাছে আরেকজন মক্কেল চলে আসল। সাহেদ চুপ হয়ে গেল ওনার সামনে ত এসব কথা বলা যাবে না। ঐশিরও খিদে লেগেছে বেশি বিরক্ত করছে। যদিও আশার সময় বাসা থেকে ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে এনেছে। ঐশিকে নীলা কাছে ডেকে নিজের কাছে বসাল।

এখানে প্রায় ঘন্টা খানেক হয়ে গেল এখনো উকিল আসছে না। নীলার বিরক্ত লাগছে কিন্তু তাতেও কিছু করার নেই, ডিভোর্স দিতে হলে যে থাকতে হবে। সাহেদের মা-বাবা, ভাই চলে আসল। আসার সময় দেখছি দুটা কলা এনেছে, সাহেদকে দিল। সাহেদ নিয়ে মেয়েকে দিল, নীলা কলা দুটো নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। এসব মায়া এখন দেখিয়ে লাভ নেই এতদিন কোথায় ছিল এসব মায়া। আর দুটো কলা এগুলো না খেলেও বেঁচে থাকতে পারব, দিনের পর দিন যখন না খেয়ে থেকেছি তখন তোমরা কোথায় থাক। আসলে ওদের মত মানুষের কাছে দুটো কলা আশা করা যায় এদের মনটাই এমন। কখনো ঐশি নিজের দাদা-দাদীর থেকে কোনো অনুষ্ঠানে একটা নতুন জামাও পায়নি। ওরা কখনো দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এতটাই হাড় কিপটে শ্বশুর বাড়ির সবাই। সাহেদ চুপ করে থাকল, আসলে সাহেদ এখানে ভদ্রতা বজায় রাখছে কিন্তু বাসায় থাকলে সাহেদের এতক্ষণে অনেক কিছু করে ফেলত নীলা ভালই বুঝতে পারছে।

উকিল সাহেব চলে আসল নীলা স্বস্তি ফিরে পেল, কারণ এতক্ষণ উনার জন্যই অপেক্ষা। উকিল সাহেব উনার চেয়ারে বসল। খাওয়া-দাওয়া করেছেন? নীলাকে জিজ্ঞেস করল উকিল সাহেব, আর না করলে কিছু আনব? নীলা বলল বাসা থেকে খেয়ে এসেছে খিদে নেই স্যার। আচ্ছা এবার তোমাদের কি সমস্যা বল। সাহেদ আমাকে ঠিকভাবে চলার মত খরচ দেয় না যা আগে দিত। সে ২/৩ টা কিস্তি নিয়ে রেখেছে, যে কিস্তি শোধ করতে হয় পুরো বেতনের টাকা থেকে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করে যা থাকে সেগুলো দিয়ে কখনো সংসার চলা সম্ভব নয়। কিস্তি নেওয়ার ত প্রয়োজন ছিল না তবে কেন নিয়েছে। যে কিস্তির টাকার জন্য কয়েকদিন পর পর ঝগড়া লেগে থাকে। প্রতিনিয়ত ঝগড়া আমার আর ভালো লাগছে না তাই আমি এর থেকে মুক্তি চাই। আমার মেয়ে এসব ঝগড়া-বিবাদ দেখে দেখে বড় হোক আমি সেটা চাই না। চিরতরে মুক্তি চাই! শুধু তাই নয় কিস্তিতে দামী মোবাইল কিনে। কতবেলা উপবাস থাকিতে হয় এই কিস্তির টাকার জন্য।

উকিল সাহেব সাহেদকে বলল, আমি চাই না তোমাদের ডিভোর্সটা হোক। আচ্ছা সাহেদ, তুমি কি চাও ডিভোর্স? এতে ত বাচ্চাটার ক্ষতি হবে। এতিম হওয়া কতটা কষ্ট! কতটা যন্ত্রণা! সেটা কখনো এতিমখানায় গিয়ে ঘুরে ওদের জীবনের গল্পগুলো শুনিয়েন। ডিভোর্সের পর হয়ত নীলা কোথাও চাকরি করবে, তখন সারাদিন হয়ত বাচ্চাটা কারো না কারো কাছে থাকবে। তখন মা-বাবাকে এই বয়সে কাছে না পাওয়াটা কতটা অসহায়ত্ব সেটা কখনো তোমাদের জীবনে ঘটলে অনুভব করতে পারতে। নিজের আপনজনের কাছে থাকা আর অন্যজনের কাছে থাকা অনেক ডিফারেন্স। তাই চাইছি তোমাদের এই ছাড়াছাড়ির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আস। সাহেদ বলে উঠল স্যার আমি চাইছি না ডিভোর্স নীলা চাইছে। নীলা যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাহলে ডিভোর্স দিয়ে ছাড়বে, ও যেটা বলে সেটা করে ছাড়ে। আচ্ছা সাহেদ তোমার এই কিস্তি শেষ হওয়ার পর আর কিস্তি নেবে না। নীলা তুমি যতদিন কিস্তির টাকা পরিশোধ না হচ্ছে ততদিন একটু কষ্ট কর তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। স্যার ওর কিস্তি শেষ হলে আবার নিবে ওর কিস্তিও কখনো শোধ হবে না আমার দুঃখও কখনো ঘোচাবে না। আচ্ছা ঠিক আছে আর নিবে না নিলে আমাকে জানাবে। আচ্ছা সাহেদ তুমি তোমার মা-বাবা, ভাইকে নিয়ে একটু বাইরে যাও আমি নীলাকে বুঝাচ্ছি। স্যার ওদের সামনে বলেন, সমস্যা নেই। ওরা সবাই বাইরে গেল।

উকিল সাহেব বলল সাহেদ তো অনেক ভালো ছেলে চুপ করে থাকে, তোমাকে অনেক ভালবাসে মনে হয় তুমি এত কিছু বলার পরও কোনো কথা বলল না। স্যার এগুলো লোক দেখানো ভদ্রতা, বাস্তবে সাহেদ যে কেমন সেটা আমার চেয়ে ভালো কেউ আর জানে না। আচ্ছা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু ভুলে থাক। ডিভোর্স হয়েছে এমন কোনো মেয়ের সাথে আলোচনা করিও, কথা বলিও তারপর কখনো যাই হোক না কেন ডিভোর্সের কথা মাথায় আনবে না। যে জীবনে সব পরিবেশে মানিয়ে চলতে পারে সে সাফল্য করতে পারে একদিন না একদিন। দুঃখের পর সুখ, রাতের পর দিন হয়, আকাশে মেঘ কেটে যাওয়ার পর রোদ হবেই। কোনো কিছু চিরস্থায়ী নয় এটাই মেনে নিতে হয়।

সাহেদের মা-বাবা, ভাই, সাহেদ চলে এল। এখন সাহেদের কথা উল্টা হয়ে গেল বাহির থেকে এসে। আচ্ছা নীলা যা চাইছে তাই হোক স্যার। এ কথাগুলো ওর মুখের কথা নয় ওর মা-বাবা আর ভাইয়ের শিখানো কথা। দুই মিনিটে বাহিরে থেকে ব্রেণ ওয়াশ করে দিয়েছে। হয়ত বলেছে কোনো সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে। আচ্ছা আমাকে দুই মাস সময় দাও তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিবে ডিভোর্স দেওয়ার। সাহেদের মা বলে উঠল স্যার ওরা কখনো এক হবে না ওদের ডিভোর্স দিয়ে দেন। ও সবসময় আমার ছেলের সাথে অশান্তি করে। আমার ছেলেকে সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়া করে। নীলা বলল স্যার আমার শাশুড়ি এতই ভালো আমাকে আমার মেয়েকে তিন/চারদিনের পঁচা বাসি ভাত, দুই দিনের বাসি পরটা, বাসি তরকারি খেতে দিত। এগুলো খেয়ে পেট ব্যাথা, অসুস্থ হয়ে যেতাম এক টাকা চিকিৎসা খরচ দিত না। সাহেদ বলার পরও কখনো প্রতিকার হয়নি একটা কাপুরুষ বিয়ে করেছি। ওরা ভালো জিনিস খায় আমাকে আমার মেয়েকে দেয় পঁচা বাসি খাবার। সাহেদের ভাই বলে উঠল এগুলো সব মিথ্যে কথা। কখনো এমন খাবার খেতে দেওয়া হয়নি। নীলা বলল স্যার আমি একটা কথাও মিথ্যে বলছি না সব সত্যি কথা। উকিল সাহেব সাহেদকে বলল এগোলো ঠিক না পঁচা খাবার ত শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব খাবার কেন দেওয়া হয়। সাহেদের মা, বাবা, ভাই প্রতিনিয়ত আমাকে শারিরিক, মানসিক, অত্যাচার করত কখনো সাহেদ এর প্রতিবাদ করে নি। বরং আমাকে ওদের এসব কর্মকান্ডে কিছু বললে শারিরিকভাবে অত্যাচার করত সাহেদও। আচ্ছা ঠিক আছে আজ থেকে কিছু হবে না। একটা স্ট্যাম্প কাগজে সব লেখা থাকবে তোমাকে কোনো টর্চার করা হবে না, হলে এর শাস্তি হবে। আর দুই মাস অপেক্ষা কর তারপর কিছু হলে আমাকে জানাবে আমি বিষয়টা দেখব।

তারপর উকিল সাহেব স্ট্যাম্প তৈরি করে সাইন নিল সবার। তাহলে আপনারা সবাই যান কেই কারো সাথে ঝামেলা করবেন না। নীলা আজ তাহলে আস। আচ্ছা স্যার আসি। নীলা মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে গেল। কিসের জন্য নীলার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে লাগল সেই নিজেই জানে না। মা কান্না করিও না আমি আছি ত! ঐশির মুখে এসব কথা শুনে নীলা হাসবে না কাঁদবে সেটাই বুঝতে পারছে না। পিছন থেকে সাহেদ নীলাকে ডাকছে নীলা! নীলা! নীলা শুনে না শোনার ভান করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। নীলা ভেবে নিল আজ থেকে সাহেদের সাথে সম্পর্কগুলো ঠিক আগের মতো আর থাকবে না…………………….।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওতে উৎসবমুখর ভোটগ্রহণ : নারী ভোটারদের উপস্থিতি : অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ, ইসলামপুর ও ঈদগাঁও ইউনিয়নে ব্যাপক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/