কথায় বলে-কারো পৌষ মাস, আর কারো সর্বনাশ! যিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের নয়ন মণি ছিলেন, আর এই সাড়ে সাত কোটি বাঙালির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য যিনি শুধু দেশ নয়, পৃথিবীর এ প্রান্তর থেকে ও প্রান্তর যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছিলেন। যেই মূহুর্তে পৃথিবীর বহু দেশের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাঁর হাতে হাত রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন। ঠিক তখনই বাংলার নয়ন মণিকে নর-ঘাতকরা স্বপরিবাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। সে দিনের নর ঘাতকদের তান্ডবে সারা দুনিয়ার মাটি কেপেঁ উঠেছিল।
বাঙালীর ময়ন মনি, বাংলার বন্ধু, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ আমাদের মাঝে নেই। আছে তাঁর স্বপ্ন’ আছে সোনার বাংলা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কাল রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ঝড়ে পড়ে বেশ ক’টি তাজা প্রান। ঘাতকরা শিশু রাসেলকেও বেঁচে থাকতে দেয়নি। “আমি মায়ের কাছে যাবো” এই বক্যটিও ঘাতকদের বুক কাপাঁতে পারেনি। ঘাতকরা শিশু রাসেলকেও নির্মম ভাবে খুন করে।
জাতির জনকের পরিবারসহ প্রত্যেক আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের উপর যুগ যুগ ধরে চলছে নির্যাতন-নিপিড়ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের দোয়া বরকতে আর আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় আজ আমাদের মাঝে সুস্থ থেকে দেশ পরিচালনা করছেন। দিন রাত বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন’ দেশ-মাটি ও মানুসের জন্য।
দেশে এখন চলছে শোকের মাস। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলার আগষ্ট মাসের মতো জঘন্য ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি। এক মাসে এতো গুলো শোকাহত দিন আমাদের অশ্রু ঝরায়। বর্ষীয়াণ নেতা এস.এম কিবরিয়া, আইভি রহমান নর-ঘাতকদের হাতে এই মাসেই খুন হন।
বছর ঘুরে আগস্ট মাস এলেই বঙ্গবন্ধু প্রমিকরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন শোকাহত ১৫ই আগস্টের জন্য। ওই দিন মিলাদ মাহফিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস ঐতিহ্য এমন কি তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয়কে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়।
শোককে শক্তিতে পরিণত করে দলীয়ভাবে আগামী দিনের পথ চলার কিছু গাইড লাইন পাওয়া যায়। বিগত দিন গুলোতে শোক সভায় আমরা বর্ষীয়াণ নেতাদের আলোচনা খুব মন দিয়ে শুনতাম। পথ চলার গাইড লাইন পেতাম।
বর্তমানে দল ক্ষমতায় মৌসুমী-হাইব্রীড নেতাদের কর্মকান্ড ভিন্ন। শোক মিছিলের প্রথম সারিতে তাদের অবস্থান। ভাব-টাব এমন দেখাচ্ছেন, তারাই যেন সবচেয়ে বেশি শোকাহত। তাদের কর্মকান্ডে শোক মানুষের কাছে বিরক্তিতে পরিণত হয়। শৃঙ্খলিত ভাবে মাস ব্যাপী কর্মসূচী পালন করলে’ আগামি প্রজন্মের জন্য ভাল হতো। হাইব্রীড আওয়ামী লীগ নেতাদের কর্মকান্ডে মানুষ বিরক্ত হন মনে মনে। যদিও এই হাইব্রীড নেতাদের এখন মৌসুম চলছে। তবে আমি মনে করি’ শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রম পুরো-পুরি চালু হলে এ সব হাইব্রীড আওয়ামীলীগারদের চিহ্নিত করতে খুব একটা কষ্ট হবে না। খুব সম্ভব তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এর একটা বিহিত করতে পারবে। কেননা প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্ঠা সজিব ওয়াজেদ জয় একটি কক্ষে বসে ৬৮ হাজার গ্রামের হাইব্রীড আওয়ামীলীগারদের চিহ্নিত করেত পারবেন বলে আশা করছি।
ক’ দিন আগে টেলিভিশনের একটি প্রোগ্রাম দেখতে ছিলাম। ওই প্রোগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী পাটগ্রামের কতিপয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে, কথা বলছেন এবং প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। এই প্রোগ্রামটি দেখে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে আমাদের প্রিয় আপাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার এক সময় সৌভাগ্য হয়েছিল, আপার খুব কাছে থাকার। আপার সহৃধ্য পেয়ে অনেকটা পথ সাহসের সাথে এগুতে পেরেছিলাম। এখন আপা যেনো আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। অবশ্য এতে আমার কোন ক্ষোভ নেই। নিরাপত্তার কারণেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এভাবে চলতে হবে।
রমজানে গণ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর ইফতার মাহফিলে আপার সাথে কথা হয়। আপা আমাকে কি বলেছেন তা ভুলে গেছি। কারণ আপার নিরাপত্তা কর্মীরা আপাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অনেক কাছের মানুষকেও এখন আপা খুব বেশি সময় দিতে পাবেন না। এক দিকে যেমন ব্যস্ততা’ অপরদিকে নিরাপত্তার প্রশ্ন।
আইন পেশার প্রয়োজনেই আমাকে লেখা-লেখি করতে হয়। তবে প্রবন্ধ-নিবন্ধ’ গল্প’ লেখার অভ্যাস নেই বলে আমার লেখা গুলো সম্মানিত পাঠক মহলের কাছে অগুছালো মনে হতে পারে, এ জন্য আমি লজ্জিত। অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে, তবে গুছিয়ে লিখতে পারি না। লিখতে বসলে সব কিছুই যেন গুলিয়ে, পাকিয়ে ফেলি। কারণ আমি তো পেশাদার লেখক নই।
মানুষ্যত্ব-মানবতা আর সভাতার দৌড়ে বাংলার বাঙালিরা ছিল বিশ্বের কাছে হাজার বছর এগিয়ে। আর এই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহাদাত্ বার্ষিকীতে লিখতে গিয়ে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। যদিও আমি ইতিহাসের ছাত্র ছিলাম না। তথাপিও যতোটুকু জেনেছি, ইখতেয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির ১৭ ঘোড় সোয়ারের ঘোড়ার খুরের আঘাতে যেমন ভারতবর্ষ পদানত হয়েছে, তেমনি আবার সারা ভারত বিজয়ী মোগল সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহ বাংলার অহংকার বারো ভূইয়াঁ মসনদ-ই-আলা ইসাখাঁর কাছে পরাজিত হয়েছিল। পৃথিবীর কেউ ভাবতেও পারেননি বাঙালিদের কাছে পাকিস্তানীদের এ ভাবে পরাজিত হতে হবে। অথচ তাই হয়েছে। বাঙালিদের বুকে ছিল সাহস আর মনে জয়ধ্বনীর শক্তি, সত্যকে পুঁজি করে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। সব শেষে বলতে চাই’ ম্যাডাম ১৫ আগস্ট আপনি আর কেক কাটবেন না, ওই কেকের চুরি বাঙালিদের বুকে বিঁধে যায়। তা হলে কি ১৫ আগস্ট কারো জন্ম দিন হবে না? না আমি সে কথা বলছিনা’ তবে এটা আপনার জন্য মানায় না। আপনিও এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। সত্যকে সত্য বলুন। কেন আপনি অযথা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন? কেন আপনি ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করছেন কেন? ডালমে কুছ কালা হ্যায়।
লেখকঃ সাবেক সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগ ও জেলা ছাত্রলীগ
সিনিয়র আইনজীবী, গ্রন্থকার ও মুক্ত সাংবাদিক।
You must be logged in to post a comment.