সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / তাদের হুমায়ূন, হুমায়ূনের শূন্যতা…

তাদের হুমায়ূন, হুমায়ূনের শূন্যতা…

Group Pic

একজন হুমায়ুন আহমেদ। বাংলা নাটক ও সিনেমার প্রাণপুরুষ। একজন ম্যাজিশিয়ান। নাটক আর সিনেমা হাতে দর্শকদের ম্যাজিক দেখিয়েছেন। তার গল্পে ছিলো ম্যাজিক, চরিত্র নির্মাণে ছিলো ম্যাজিক। সেই জাদুর টানেই দর্শকদের বোকাবাক্সের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেছেন। প্রচলিত ধারার নাটককে ভেঙেচুরে নিজেই নতুন এক ধারার জন্ম দিয়েছেন। জায়গা করে নিয়েছেন হাজারো ভক্তের বুকের বাম পাশটায়। সেই ম্যাজিশিয়ান আজ নেই, চার বছর হলো। ঘুরে ফিরে তার এঁকে দেয়া পথেই ছুটছে আমাদের টিভি নাটক। কিন্তু কোথায় যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে। বারবার হোঁচট খাচ্ছে। টিভি খুললেই নাটকে তার শুন্যতাটা বারবার পীড়া দিচ্ছে দর্শকদের। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে সবচেয়ে বেশি মিস করছেন তার কাছের মানুষরা। যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন। মৃত্যর আগ অবধি পাশে থেকেছেন। যারা তার নাটকে অভিনয় করেই পরিচিতি পেয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই। তাদেরই কয়েকজন বাংলামেইলকে জানালেন হুমায়ুন আহমেদকে ঘিরে নানা স্মৃতি, টিভি নাটকে তার শুন্যতাসহ নানা বিষয়।

স্যারের সঙ্গে ভালো কাজের স্মৃতিগুলো নিয়েই বাঁচবো

ডা.এজাজ

প্রতিটি কাজে তাকে মিস করি। কোন নাটকের সংলাপ দেখলেই মনে পড়ে। তিনি কতো সু্ন্দরে করে লিখতেন। যখন অভিনয় করি তখন মনে পরে উনি কতো সুন্দর অভিনয় করাতেন। তিনি যতো মায়া স্নেহ করতেন আমাকে আর কেউ করেনি। তার শুটিং ইউনিটে মানবিক ব্যাপারগুলো ছিলো। কিন্তু অন্য ইউনিটে তা দেখা যায় না। এখনকার নাটকে আনন্দ উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা নেই। এখন হরদম কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এগুলোর কথা বলে না। স্যারের যে কাজগুলো করেছি সেই কাজগুলোর কথায় শুনি এখনো। স্যার চলে গেছেন আর আমাদের সমস্ত ভালো কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন। স্যারের সঙ্গে ভালো কাজের স্মৃতিগুলো নিয়েই বাঁচবো।

Humayun Ahmed

নাটকে উনার উপস্থিতি ভীষণ মিস করছি

ফারুক আহমেদ

তিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। উনাকে আমি বায়াত্তর সাল থেকে চিনতাম। তখন স্কুলে পড়তাম। উনার ছোটভাই (আহসান হাবীব) আমার স্কুল ফ্রেন্ড। আহসান হাবীবের সঙ্গেই উনার বাসায় গিয়েছিলাম। তবে তখন তেমন পরিচিতি ছিলো না। নব্বইয়ের দশকে বিটিভির ‘অচিন বৃত্ত’ নামে একটি নাটকে কাজ করেছিলাম। তার সঙ্গে সম্পর্কর শুরুটা তখন থেকেই। তারপর উনার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। দেখাও হয়েছে অসংখ্যবার। তবে শেষ দেখা হয়েছিল যখন তিনি আমেরিকা থেকে ফিরে এসেছিলেন কয়েকদিনের জন্য। শুনলাম পরদিন আবার চলে যাবেন। আগেরদিন রাতেই উনার বাসায় গেলাম। অনেক লোকজন ছিলো। তখন তিনি সবাইকে বললেন ফারুককে নিয়ে একটা ঘটনা আছে। ঘটনাটা হলো, ‘ছোটছেলের জন্মদিনে ভুলে ফারুককে আমি দাওয়াত দিইনি। না বলার পরও ফারুক চলে এসেছে। এসে বলে আপনি তো দাওয়াত দিলেন না। আমি দাওয়াত ছাড়াও চলে এসেছি। এটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা।’ বলতে বলতেই উনার চোখদুটো ছলছল করে উঠছিলা। সেইবারই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। এরপর আর কখনো কথা হয়নি। কয়েকদিন আগে আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম। উনাকে যেই মসজিদে গোসল করিয়েছে সেখানকার ছবি তুলে নিয়ে এসেছি। ছবিগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছি।

উনি চলে যাওয়ার পরও আমি অনেক নাটকেই কাজ করছি। কিন্তু নাটকে উনার উপস্থিতি ভীষণ মিস করছি। উনার মতো ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার এখন আর নেই।

পথপ্রদর্শক বলবো উনাকে

স্বাধীন খসরু

আমি কখনোই তার শুন্যতা অনুভব করি না। উনি আমার মনের আশেপাশেই আছেন। উনাকে ভুলে থাকার সুযোগ নেই। প্রতিদিন রাস্তাঘাটে, শপিংয়ে যার সঙ্গেই দেখা হয় তিনিই ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করেই হুমায়ুন স্যারের প্রসঙ্গ তোলেন। স্যারের সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল দখিনা হাওয়ায়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি সিনেমা করার কথা। টেকনাফে যা্ওয়ার আগে উনার সঙ্গে দেখা করলাম। সেইবার আমাকে একটা বই উপহার দিয়েছিলেন। ইংরেজি জিরো বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘শূন্য’। সেইবারই উনার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।

আর উনার নাটক নিয়ে যদি বলি তাহলে বলবো, উনি নাটকের দর্শক তৈরী করেছে। উনার কারণে যেমন প্রকাশনা শিল্প তৈরী হয়েছে। তেমনি সিনেমার দর্শক তৈরী হয়েছে। আগুনের পরশমনি সিনেমাটা না হলে কেউ ভাবতই না এফডিসির বাইরে সিনেমা সম্ভব। এটা উনিই শুরু করেছিলেন। পথপ্রদর্শক বলবো উনাকে। এখান থেকে উন্নতি না করলে আমাদের ব্যথর্তা।

একবার প্রশ্ন করলাম, স্যার মশা কামড়ালে ফুলে যায় কেন?

মনিরা মিঠু

হুমায়ূন স্যারকে এতো বেশি শ্রদ্ধা করতাম যে, পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে জোরে নি:শ্বাস ফেলতেও ভয় পেতাম। শুটিংয়ে যখন খুব হইচই করতাম মাঝখানে স্যার এলেই চুপ হয়ে যেতাম। অথচ শুটিংয়ের শেষে তিনি নিজেই আমাদের নিয়ে হইচই করতেন। অনেকটা বারো বছরের শিশুর মতো। তিনি জাদু দেখাতেন আমাদের। আমি একবার প্রশ্ন করলাম, স্যার মশা কামড়ালে ফুলে যায় কেন? উনি বললেন আরেকদিন বলবো। পরে উনি অনেক বই ঘাটাঘাটি করে সুন্দর করে একদিন বুঝালেন। মনে হবে যেন মশার উপর হাজার হাজার বই পড়েছেন। আর তিনি খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন। আমাদেরও বলতেন ছবি আঁকা শিখতে চাইলে ওমুক বই পড়ে প্রাকটিস করো।

আরেকটি কারণে স্যারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অপরিমেয় কারণটা হলো স্যার নামাজ পড়তে উত্সাহিত করতেন। অনেকে তাকে নাস্তিক বলে। কিন্তু এটা তাকে না বুঝে বলে। তিনি একজন আস্তিক। আল্লাহর প্রতি তার অন্যরকম শ্রদ্ধা আছে। নুহাশ পল্লীতে নামাজের জন্য আলাদা জায়গা করেছেন। যেদিন প্রথম আমি নুহাশপল্লীতে ঢুকলাম সেদিন তিনি বললেন নামাজ পড়ো। নামাজ পড়ে দোয়া করো।

তিনি অসহায় দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন। নুহাশ পল্লীর কেয়ার টেকার নুরুল হকের মেয়ের বিয়ের সময় তিনি কী এক কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন। পরে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললেন নুরুলের মেয়ের জন্য সুন্দর দেখে দুল কিনবা। দুল নিয়ে জুয়েলের সঙ্গে বিয়েতে যাবা। আর প্রোডাকশন ম্যানেজার জুয়েলের ছেলে একবার খুব অসুস্থ। আমার সামনে তাকে চিকিত্সার জন্য টাকা দিয়েছেন। আসলে এগুলো অনেকেই জানে না। উনি প্রচারও করেন নি। আর তার নির্মাণের কথা যদি বলি তাহলে বলবো, তিনি গল্প আর আর্টিস্টের অভিনয়ের উপর বেশি নজর দিতেন। কিন্তু এখন সেটা খুব কম দেখা যায়। গল্পের ক্ষেত্রেই তার শূন্যতাটা বেশি অনুভব করছি।

সূত্র:banglamail24.com

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার মমতাজুল ইসলামের; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/press-conference-election-sagar-30-4-24/

ঈদগাঁওতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার মমতাজুল ইসলামের

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও : কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে চেয়ারম্যান পদের ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/