মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :
থানায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির মামলা এজাহার, কিন্তু পুলিশের বিচক্ষণতায় ও তদন্তে বেরিয়ে আসে তক্ষক পাচারের তথ্য। নিজের অপরাধ ঢাকতে ও তক্ষকের লেনদেনের ঘটনা গোপন করে ডাকাতির এজাহার সাজিয়ে লামা থানায় মামলা করেন, আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত নাজির হোসেনের ছেলে মোঃ হাছান (৪২)।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মামলার বাদী মোঃ হাছান গত ২২ অক্টোবর রাতে ৪ জনকে এজাহার নামীয় ও ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ করে ডাকাতির ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে হাছান বলেন, গত ২২ অক্টোবর দুপুর ২টায় ৫টি গরু বিক্রির টাকা নিয়ে চকরিয়া থেকে আলীকদম আসার পথে লামা থানাধীন লামা-চকরিয়া সড়কের ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড নয় মাইল নামক স্থানে ডাকাতের কবলে পড়েন। ডাকাতরা তার কাছ থেকে গরু বিক্রির নগদ ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ১টি ২৯ হাজার ৫শত টাকা মূল্যের মোবাইল, ১৮ হাজার টাকা দামের ১টি ঘড়ি ও ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা দামের ১২৫ সিসি ডিসকভার মোটর সাইকেল নিয়ে যায়। ডাকাতরা তার পরিচিত এবং তাকে মেরে রক্তাক্ত করে।
পুলিশ জানায়, ডাকাতির ঘটনাটি কয়েকটি কারণে আমাদের কাছে সন্দেহ মনে হয়। এজাহারে উল্লেখিত ঘটনাস্থলে বিগত সময়ে কখনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া মোটা অংকের টাকা, মোবাইল ও ঘড়ি নেয়ার পড়ে ডাকাতরা তার মোটর সাইকেল নিয়ে যাওয়ার কথা নয়। বিষয় গুলো মাথায় নিয়ে পুলিশের একটি টিম গভীর তদন্তে নেমে পড়ে। তদন্তের বেরিয়ে আসে মোঃ হাছান একজন তক্ষক পাচারকারী। এজাহারে উল্লেখিত আসামীদের কাছে তিনি তক্ষক বিক্রি করেন। এজাহারে চকরিয়া থেকে আলীকদম আসার কথা লিখলেও বাস্তবে তিনি সেদিন তক্ষক নিয়ে আলীকদম থেকে চকরিয়া যান। চকরিয়া উপজেলার হাঁসেরদিঘি নামক স্থানে আসামীদের সাথে বসে তক্ষক লেনদেন করেন। তক্ষক বিক্রি বাবদ পূর্বেই ক্রেতাদের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন হাছান। কিন্তু বিক্রির জন্য নেয়া তক্ষকটি সাইজে ছোট থাকায় তারা টাকা ফেরত চান এবং টাকা দিতে না পারায় সেখানে হাতাহাতি হয় ও হাছানের নিয়ে যাওয়া ভাড়া মোটর সাইকেলটি রেখে দেয়।
ঘটনাটিকে বাদী হাছান সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে লামা থানায় এজাহার দেয়। আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে লামা থানাধীন কুমারী পুলিশ ক্যাম্পে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়েছে। সেখানে সবাই তক্ষক বেচাবিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ডাকাতির ঘটনা সাজানো বলে পুলিশকে জানায়।
এবিষয়ে বাদী হাছানের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি। ডাকাতির ঘটনা সত্য নয়। বিক্রি করতে নেয়া তক্ষকটি কোথায় এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হাতাহাতির একপর্যায়ে তক্ষকটি কোথায় চলে গেছে খেয়াল করিনি। মোঃ হাছানের স্ত্রী পাখি বেগম বলেন, বিষয়টি আমরা দু’পক্ষ মীমাংসা করে ফেলেছি। এখন লামা থানায় গিয়ে আপোশনামা দেব।
কুমারী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মাসুদ আলম বলেন, সোমবার বিকেলে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসি। আসামীদের সাথে বাদী হাছানের টাকা পয়সার লেনদেন ছিল। তারা পূর্ব পরিচিত। ঘটনাটি ডাকাতির ঘটনা ছিলনা। সেদিন চকরিয়া থেকে আলীকদম আসার কথা এজাহারে লিখলেও তিনি ১নং আসামী আব্দুল্লাহ কে সাথে নিয়ে আলীকদম থেকে চকরিয়া যান। বিষয়টি নিয়ে তারা নিজেরাই সমাধান করতে চাচ্ছেন। বাদী হাছানের স্ত্রী পাখি বেগম বৈঠকে বলেন, অনেকবার নিষেধ করার পরেও তার স্বামীকে তক্ষক লেনদেন ছাড়েননি।
You must be logged in to post a comment.