সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / নিরাপদ মনে না করা পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরবে না

নিরাপদ মনে না করা পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরবে না

উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মিছিল।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। শুরু থেকেই তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল থেকে কথা চলছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা যে গণহত্যা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ওআইসিসহ বিভিন্ন দেশের নেতারাও মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো সেখানে গণহত্যার প্রমাণ দেখিয়েছে। নির্যাতনের মুখে সীমান্তের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আলী আকবর ও মোরশেদ আলম বলেন, আমাদের অনেক নির্যাতন করেছে। আমরা আমাদের নাগরিকত্বসহ নিরাপদ মনে না করা পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরবো না।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে সমীক্ষা শেষে মানবাধিকার সংগঠনের বক্তব্য, এটা এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপকতর সহিংসতার স্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গা নারীদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের, আগুনে পুড়িয়ে শিশু হত্যা এবং যুবকদের হত্যা এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার। যদিও আগে থেকেই রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বসহ মিয়ানমারের সবরকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযোগ তুলেছে রোহিঙ্গাদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে। একই সঙ্গে তারা নিজেদের অপকর্মের অভিযোগও বরাবর অস্বীকার করে আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিয়ানমার সরকার এবং বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। তবে ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া কিংবা তাদের নিরাপত্তারও কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়াকে অনেকে তামাশা বলে মনে করছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়াটা কার্যকর হবে না। যতক্ষণ তারা নিরাপদ মনে করে স্ব-ইচ্ছায় ফিরে না যাবে। বরং তাদের মাতৃভূমিতে স্বশাসিত এলাকা দরকার। অন্যথায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। কারণ ১৯৭৮ সালেও অবৈধ নাগরিকদের বের করে দিয়েছিল মিয়ানমার। ওই সময় বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমার। এবার ও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তবে আশার আলো হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং ওআইসি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি সরেজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতারা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের সাথে কথা বলে চলে যান কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়ায় রোহিঙ্গারা হতাশ।

এদিকে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গারা দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছে। স্বদেশে ফেরা নিয়ে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা। ১৯ জানুয়ারী ৫ দফা দাবি সংবলিত ব্যানার, প্লে-কার্ড ফেস্টুন, নিয়ে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিদেশি এনজিও অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সর্বশেষ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের সময়ও রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয় স্বজনের হত্যার বিচার চেয়ে মিছিল করেন। তবে ওআইসি প্রতিনিধি দলের সফরের সময়ে রোহিঙ্গারা তাদের সাথে কথা বলেন এবং কোনো প্রকার প্রতিবাদ বা মিছিল করতে দেখা যায়নি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং ওআইসি প্রতিনিধিদল বলেন, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দেখতে চান। রোহিঙ্গারা যদি দেশে ফিরে যেতে না চায় তা হলে তা হবে আরো মারাত্মক। তবে যাতে তারা ফিরে যেতে চায় এবং গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারে তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের পাশে আছি।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/water-distribution-lama-mayor-rafiq-30-4-24-1/

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর পক্ষ থেকে লামা বাজারে জনসাধারণের মাঝে নিরাপদ পানি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/