সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / নীরবে ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদক কেটামিন

নীরবে ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদক কেটামিন

কেটামিন দেখতে অনেকটা চিনির দানার মতো। ছবি: সংগৃহীত

দেশব্যাপী চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। এ অভিযানে প্রচলিত সব মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়েছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে নীরবে অপরিচিত নতুন এক মাদক ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। মাদকটির নাম কেটামিন।

মরণঘাতী মাদক কেটামিন দেখতে অনেকটা চিনির দানা বা ইয়াবা ট্যাবলেটের মতোই। এটা অন্যান্য মাদকের মতোই একজন ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। এ মাদকটিই ধীর গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে।

তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীসহ সারাদেশে কীভাবে এবং কারা এ মাদক ছড়াচ্ছে তা জানার চেষ্টা করছে। চক্রটিকে শনাক্তে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই।

এই মাদক অন্যান্য মাদকের চেয়ে দামে কিছুটা বেশি হওয়ায় এখনও অনেকের হাতে পৌঁছায়নি। মূলত উচ্চবিত্ত পরিবারের যুবক-যুবতীরাই এর ক্রেতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের নামি-দামি নাইট ক্লাব ও আবাসিক হোটেলগুলোতে লুকিয়ে এটি সেবন করা হচ্ছে। এটা গ্রহণ করে সাধারণত হোটেল বা ডিজে পার্টিতে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে এই মাদকটি ডিজে পার্টির ‘রেপ ড্রাগস’ বলেও পরিচিতি পেয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর ঢাকার বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে একটি ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে গুলশান, বনানী, খিলক্ষেত এবং উত্তরার বিভিন্ন হোটেল এবং ডিজে পার্টিগুলোতে পুলিশি নজরদারির কারণে খুব গোপনীয়তা রক্ষা করেই চলছে এর ব্যবসা।

গােয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে ২৫ কেজি কেটামিন নিয়ে এক ভারতীয় নাগরিক আটক হয়েছিলেন। সেই কেটামিনগুলো নিয়ে তিনি মূলত বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই শাহজালালে আটক হন। এর আগে ওই নাগরিক বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। পরে তিনি আকাশ পথে বালিতে যেতে চেয়েছিলেন।

তবে গত কয়েক বছরে বিমানবন্দরে কেটামিনসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ধরা পড়লেও সংবাদমাধ্যমে সে খবর ততটা প্রকাশ হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে ঢাকায় গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, শাহবাগ, মগবাজার, পুরান ঢাকা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কেটামিন সরবরাহের বিশেষ সিন্ডিকেট।

মূলত নাটক-মডেলিংয়ের আড়ালে রাজধানীর মিডিয়াপাড়া, নামি-দামি হোটেল এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীদের মাঝে চলছে কেটামিন ড্রাগস সেবন ও রমরমা ব্যবসা। যখন দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে, সেই সময়েও আড়ালে রয়েছে কেটামিন চক্র।

কেটামিন। ছবি: সংগৃহীত

জানা গেছে, মাদক ব্যবসার বিশেষ কৌশল হিসেবে উঠতি বয়সী তরুণ মডেল এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নেশাটি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ড্রাগটির ডিলাররা। তবে কেটামিন চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহ এক ব্যক্তিকে ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা শাখার একটি সূত্র। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশের একটি দৈনিক পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধিও কাজ করছেন কেটামিন নিয়ে।

সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়াবা, ফেনসিডিল এখন সহজলভ্য না হওয়ায়, একটু টাকা খরচ করলেই পাওয়া যাচ্ছে কেটামিন।

আতিক রহমান নামের এক মডেল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণী এবং উঠতি মডেলদের মধ্যে কেটামিন সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েজন শিল্পী।

এসব শিল্পীদের অভিযোগ, আতিক এ ব্যবসা করে ইতোমধ্যেই ঢাকায় কয়েকটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি প্রায়ই নাটক বানানোর আড়ালে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। কেটামিন ড্রাগস সরবরাহে আতিকের নেতৃত্বে কয়েকজন উঠতি মডেল যুবক কাজ করে। তারাই মূলত এ কেটামিন সরবরাহ করে বিভিন্ন উঠতি মডেলদের মাঝে।

এ বিষয়ে মডেল আতিক রহমানের সঙ্গে প্রিয়.কমের পক্ষ থেকে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণী মডেল জানান, নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে তাকে প্রতিদিন এ ড্রাগস নিতে হয়। তবে আগে এটি সহজলভ্য ছিল। কিন্তু এখন অনেক বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

কী এই কেটামিন

কেটামিন হচ্ছে ইয়াবা সদৃশ নেশা জাতীয় পাউডার। যা দেখতে অনেকটা চিনির দানার মতো সাদা। কেটামিন তরল অবস্থায় পান করে বা ইনজেকশনের মাধ্যমেও শরীরে গ্রহণ করে অথবা বিভিন্ন পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করে আসক্তরা। এ ছাড়া অনেক সময় মারিজুয়ানার সঙ্গে হেরোইনের মতো ধোঁয়া সৃষ্টি করেও নেশা করে থাকে। অতিরিক্ত সুখ খুঁজতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন পার্টির নাচ গানের সময় ব্যবহার করে বলে কেটামিন ‘রেপ ড্রাগ’ বা ‘ক্লাব ড্রাগ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে ডিজে পার্টির টিম লিডাররা এটাকে ‘টিকে গড ড্রাগস’ও বলে থাকে।

কেটামিন মূলত অবশ করার ওষুধ হিসেবে ১৯২৬ সালে আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭০-এর দশকে অজ্ঞান করার কাজে ইউরোপ-আমেরিকায় ওষুধটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মাদক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ইয়াবা বা হেরোইনের মতোই একটা ড্রাগস। কিন্তু কেটামিন দেহের সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমকে ব্লক করে অচেতন করে ফেলে। এ কারণে কেটামিন গ্রহণকারীর চোখে দুইটি ফোকাসের সৃষ্টি হয়। তখন সেবনকারী অজ্ঞান ও মাতাল হয়ে যান।

কেটামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরীক্ষাগারের প্রধান ক্যামিকেল পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘কেটামিন এমন একটি মাদক যা গ্রহণ করতে করতে এক সময় নেশায় পরিণত হয়। সেটা পাওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে যায়। এটি নীরব ঘাতক মাদক। পরিণতিতে একজন ব্যক্তিকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।’

এই কেটামিন সম্পর্কে বাংলাদেশের অনেক মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যরাও জানেন না বলে মন্তব্য করে ড. দুলাল চন্দ্র আরও বলেন, ‘কেটামিন সেবনকারী সেবন করার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই নিজকে খুব স্মার্ট এবং অতিরিক্ত স্বতঃস্ফূর্ত স্পর্শ কাতরতা অনুভব করে। নতুন নেশাকারীর ক্ষেত্রে শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বিবশ হওয়ায় কয়েক ঘণ্টার জন্য সেক্স (যৌন) ড্রাইভে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কিন্তু পরবর্তীতে (তৃতীয় ধাপে) তার যৌন অনুভূতির সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।’ আর এভাবেই এক সময় তার পুরো যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের ডিবির ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা কিছু সময় অল্প পরিমাণে কেটামিন ড্রাগস জব্দ করেছি। কিন্তু এটি কীভাবে এবং কারা ছড়াচ্ছে তা এখনো জানতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে আমাদের টিম। আশা করছি সেই চক্রটিকে পেয়ে যাব।’

র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘এমন একটা ড্রাগস নীরবে ছড়াচ্ছে বলে আমরাও জানি। কিন্তু সেটি কীভাবে এবং কারা বিক্রি করছে, তাদের এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি।’ তবে মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে কেটামিন তারাও জব্দ করেন বলে জানান তিনি।

সূত্র:মোস্তফা ইমরুল কায়েস-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামায় পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করল সাজাপ্রাপ্ত আসামী

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :বান্দরবানের লামায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হন পুলিশ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/