শহীদুল্লাহ কায়সার; কক্সভিউ :
কক্সবাজারের শহরের রাখাইন পল্লীগুলোতে এখন উৎসবের ঘনঘটা। রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের মুখে বিবর্ণতা যেন এক সুদূর অতীত। বাড়িতে বাড়িতে বইছে আনন্দ আর বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। বর্ষবরণ (জলকেলি) উৎসবের দ্বিতীয় (১৮ এপ্রিল) দিনেও যা কমেনি। উল্টো বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। আনন্দের সঙ্গী পানি ছিটানোতে সীমাবদ্ধ নেই উৎসবের আয়োজন। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ্দুর ও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি উৎসবের আনন্দে। বাষ্প হয়ে ভেসে যাওয়া জলকেও বন্দী করে সঙ্গী করা হচ্ছে। নারী-পুরুষ বন্দী করে রাখা উত্তপ্তজলে চুমুক দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে, যেন এক অমৃত সুধা পান করছে তাঁরা। বড়দের অনুসরণ করে শিশুদেরকেও এই জলে ঢেকুর গিলতে দেখা গেলো গত দুইদিন। এরপরই আথালি-পাথালি পানি ছুড়ছে তারা।
নারীরা সাজছে অপরূপ সৌন্দর্য্য। সখীদের মধ্যে যাঁদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাঁরা এক জোট হয়ে গঠন করেছে নিজেদের বলয়। শরীরে ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র পরিধান করলেও রং ছিল একই রকম। হাতের চুড়ি থেকে শুরু করে ললাটের টিপ পর্যন্ত কোথাও ভিন্নতা রাখেনি তাঁরা। দূর থেকে দেখলে অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়ে কোনটি কে। এই সাজ-সজ্জা নিয়েই তাঁরা উদযাপন করছে উৎসব। ঘুরে বেড়াচ্ছে এ প্যান্ডেল থেকেও প্যান্ডেল। প্যান্ডেলগুলোও তাদের কাছে আসা অতিথিদের বরণ করে নিতে উন্মুখ হয়ে চেয়ে থাকে। কোন দল আসার আওয়াজ পেলেই প্যান্ডেলের মধ্যে থাকা নারীরা নড়ে চড়ে বসে। এলেই কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ছুড়ে মারে পানি। এরপরই পরস্পরের মধ্যে চলে আনুষ্ঠানিক পানি ছিটানো।
উৎসবকে প্রাণ দিতে আগে থেকে প্যান্ডেলগুলোকে সাজানো হয়েছে বিচিত্র সাজে! নানা বর্ণের ফুলসহ রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। সেগুলোর শব্দের তালে তালে নাচ আর গানের সংমিশ্রনে চলে পানি ছিটানো। নারীদের মতো পুরুষ আর শিশুরাও বিভিন্ন প্যান্ডেলে বিচরণ করে পালন করছে উৎসব। তাদের অনেকে ছোট পিক আপ ভাড়া করে সেগুলোতে চড়েই উদ্যাপন করছে উৎসব। আবার অনেকে পদযাত্রার মাধ্যমে উদ্যাপন করছে উৎসব। ঢাক-ঢোল আর আধুনিক যন্ত্রপাতি তাঁদের সঙ্গী।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই উৎসব হারিয়ে যায় প্যান্ডেল থেকে। রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ প্রস্তুত হয় আগামি দিনের উৎসব উদযাপনে। মঙ্গলবার উৎসবের শেষ দিন গত দু’দিনের মতো আনন্দ আর উচ্ছ্বাস বজায় থাকবে। সেটাই এখন সময় প্রত্যাশা।
You must be logged in to post a comment.