বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে অজান্তে সমুদ্রসীমা লঙ্গন করায় মাঝি-মাল্লাসহ ৫৭ জন জেলে এখন ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছে। তারা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বাসিন্দা। কলকাতার অলিপুর সেন্ট্রাল কারাগারে বন্দি থাকা জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আত্মীয়সহ ফিশিংবোট মালিকের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়সহ নানা দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। বন্দিদের নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে নোয়াখালী, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া থানা পুলিশ। কিন্তু ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত চকরিয়া ও মহেশখালী থানা পুলিশ প্রতিবেদন দিতে না পারায় বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।
চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও এফবি সাঈদ হোসেন চকরিয়া নামক ফিশিং বোটের পরিচালক রফিক আহমদ বলেন, আমার পরিচালনাধীন বোটসহ জেড রহমান কুতুবদিয়া নামের দুটি মাছ ধরার ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায় মাঝি-মাল্লাসহ ৫৭ জন জেলে। নোয়াখালী, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার পর ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে পড়ে। চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ১০ নভেম্বর চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-৪৭২/১৫) দায়ের করি। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয় নিখোঁজদের উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে।
রফিক আহমদ আরো বলেন, নিখোঁজদের সন্ধান করতে গিয়ে পরে নৌপথে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে খবর পাওয়া যায় সুন্দরবন সংলগ্ন রাঙ্গাবালী এলাকায় গতিপথ হারিয়ে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করলে ওই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের আটক করে। তারা আটককৃতদের বিরুদ্ধে চব্বিশপরগনা জেলার ফেজারগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এবং আটকদের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থাপন করলে তাদের প্রত্যককে ৩ মাসের করে বিনাশ্রম সাজা প্রদান করেন। এরপর থেকে বাংলাদেশের তিন জেলার জেলেরা অলিপুর সেন্ট্রাল কারাগারে বন্দি রয়েছে।
বোট মালিকসহ একাধিক সূত্র জানায়, ভারতে বন্দি থাকা জেলেদের আত্মীয়দের আবেদনের প্রক্ষিতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশী জেলেদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়। প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে নিজ নিজ এলাকার বাসিন্দাদের বিস্তারিত প্রতিবেদন যথাসময়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও নোয়াখালী থানা পুলিশ। কিন্তু কক্সবাজারের মহেশখালী ও চকরিয়া থানা পুলিশ প্রতিবেদন না পাঠানোয় বন্দিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা বিলম্ব হচ্ছে। তবে চকরিয়া থানা পুলিশ দাবী করেছে মন্ত্রণালয়ের আদেশনামা না পাওয়ায় প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হয়নি।
ভারতের কারাগারে বন্দি জেলেরা হলেন- চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ছাইরাখালী গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে দিল মোহাম্মদ, গোলাম কুদ্দুছের ছেলে আলী হোছন, আবদুল করিমের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, নুরুল হকের ছেলে বাদশা মিয়া, আনোয়ার হোছনের ছেলে মোহাম্মদ হোছন, বিএমচর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকার মৃত বুজুরু মেহেরের ছেলে এনামুল হক, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট চা বাগান এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে রিদুয়ান ও চিরিংগা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ এলাকার ছরওয়ার আলমের ছেলে মোহাম্মদ মামুন। চট্টগ্রামের বাশখালী উপজেলার আনন্দপাড়ার মৃত শাহ আলমের ছেলে মো: হাছন মাঝি, জালিয়াঘাট হায়দার আলী বাড়ির মৃত আলী আকবরের ছেলে আবদুর রহিম, বাঁশখালী জলদি এলাকার আছন আলীর ছেলে আলী হোছন, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট আমতলী এলাকার আবুল কাসেমের ছেলে হাবিবুর রহমান, সাইডপাড়ার ছালেহ আহমদের ছেলে মোজাম্মেল হক, পূর্বসুতরিয়া গ্রামের আলী আহমদের ছেলে আবুল কালাম, উত্তর সুতরিয়া গ্রামের আমির হামজার ছেলে বাদশা মিয়া, সরইতলা গ্রামের মৃত সোলতান আহমদের ছেলে নুরুল আবছার, বেগুনবুনিয়া গ্রামের বেলাল হোছাইনের ছেলে দিদারুল ইসলাম সুজন, উত্তর ঝাপুয়া এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে ওমর ফারুক, দক্ষিণ ঝাপুয়া গ্রামের ছালেহ আহমদের ছেলে মো: ইলিয়াছ, মাতারবাড়ি ছাইরার ডেইল গ্রামের মৃত মোজাহার মিয়ার ছেলে মো: নুরুচ্ছবি, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ গোলদারপাড়ার আবদুস সালামের ছেলে দেলোয়ার হোছন, একই এলাকার মো: আবু মোক্তারের ছেলে মো: গোলামুর রহমান, সৈয়দ পাড়ার মৃত শামসুল আলমের ছেলে মো: রোবেল, রোসাইপাড়ার মৃত আবু তৈয়বের ছেলে মো: নুরুল কাদের, আলী আকবর ডেইল গ্রামের আবদুল গণির ছেলে মো: আক্কাস ও গোলাম আব্বাসের ছেলে মো: সাহাব উদ্দিন। নাম পাওয়া জেলেরা চকরিয়া ফিশিং বোটে ছিল। এছাড়াও কুতুবদিয়ার ফিশিং বোটে ছিল কুতুবদিয়া ও নোয়াখালীর ৩১ জন মাঝিমাল্লাসহ জেলে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ভারতে বন্দি চকরিয়ার মাঝিমাল্লাসহ জেলেদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কোন কাগজপত্র এখনো থানায় আসেনি। এ ধরণের কোন নির্দেশনা পেলে দ্রæত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন (রিপোর্ট) পাঠানো হবে। এরপরও গুরুত্ব সহকারে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.