হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়ার বনভূমি দখল করে গড়ে তোলা ৫০টি পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অবৈধ বসতি স্থাপনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তৎকালীন উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম হোসেন সদর বনবিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও বালুখালী বনবিট কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান সহ ৩ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হলেও থামেনি বনভূমি দখলের অবৈধ মহোৎসব। সংরক্ষিত রক্ষিত বনসম্পদ উজাড় করে বসতি স্থাপনের ফলে জীব বৈচিত্র ও বন্য পশু প্রাণি তাদের আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে।
সম্প্রতি স্থানীয় কাঠুরিয়া ছেলেরা একটি বাঘের বাচ্চা উদ্ধার করে বনকর্মীর কাছে হস্তান্তর করলে তারা ঐ বাঘের বাচ্চাটি সাফারী পার্কে হস্তান্তর করেন।
অভিযোগ উঠেছে, চলতি সনের জানুয়ারীতে উখিয়া রেঞ্জ অফিসে মনিরুল ইসলাম রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করলে এ উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার একর বনভূমি অস্থিত্ব নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়া বিভিন্ন বনবিটে দায়িত্বরত বনবিট কর্মকর্তাদের অভিযোগ নবাগত রেঞ্জ কর্মকর্তা আর্থিক কেলেঙ্কারী, কর্মস্থলে অনুপিস্থিতি ও সমন্বয়হীনতার কারণে উখিয়া বন বিভাগে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে বনভূমি জবর দখলের অসম তৎপরতা।
সরেজমিন উখিয়ার অন্যতম বনবিট বালুখালী ঘুরে জানা যায়, মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোঃ খলিল (৪৮) বালুখালী বিট অফিসের পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। বিট কর্মকর্তা মোবারক আলী জানান, রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ না থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। একই ব্যক্তি বালুখালী কাস্টমস এর সম্মুখস্থ প্রায় ২ একর বনভূমি ভোগ দখল করছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ঐ বনভূমিতে বাগান সৃজন করা হয়েছিল। সৃজিত গাছপালা উপড়ে ফেলে ভূমিদস্যু মোঃ খলিল ঐ জায়গাটি জবর দখল করে। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, বন দখল, বসতি স্থাপন, সামাজিক বনায়নের গাছপালা লুটপাটের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ বিলুপ্ত হচ্ছে। আবাস স্থল হারিয়ে বন্য পশু প্রাণি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
এর আগে বালুখালী পানবাজার এলাকায় বনভূমির বিশাল পাহাড় কেটে পাকা স্থাপনা তৈরি করছিল স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পরিবার। এ নিয়ে স্থানীয়রা পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ করেছে। জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে মামলা রুজু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বালুখালী সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী সদস্যদের সভাপতি বদিউর রহমান সিকদার জানান, সামাজিক বনায়নের গাছ লুটপাটের ব্যাপারে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বালুখালী বনবিট কার্যালয়ের পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত ছবিসহ প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যম-এ ফলাও করে প্রকাশিত হওয়ার ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার সকালে একদল ভূমিদস্যু রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে দেখা করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বনবিট কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে কক্সবাজার বন বিভাগীয় কর্মকর্তা আলী কবির অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদানের কথা স্বীকার করলে নির্মাণ সামগ্রী জব্দ না করায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
You must be logged in to post a comment.