হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
প্রচন্ড বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি আবারও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে সেখানকার প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। পাশাপাশি উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও থাইংখালীর সমতল এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ৫ শতাধিক ঝুপড়ি ঘর ধসে পড়েছে। পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর দিনযাপন করছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ নুর জানান, মঙ্গলবার সকালে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত বইতে শুরু করে। রাত যতই গভির হয়েছে ততই বেড়েছে বৃষ্টি ও বাতাসের গতিবেগ। ভোররাতের দিকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়ায় অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার মতে, কুতুপালং ক্যাম্পে শতাধিক ঝুপড়ি ঘর ধসে পড়ে বেশকিছু পরিবার গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে। কেউ কেউ অনেকের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
বালুখালী ক্যাম্পের লালু মাঝি জানান, তার ক্যাম্পে পাহাড় কেটে বসবাসের উপযোগী করে অধিকাংশ ঘর তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগে প্রশাসন কিছু পরিবার নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে গেলেও ২ শতাধিক পরিবার ঝুকিঁপুর্ণ অবস্থায় থেকে যায়। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের খাদে ও ওপরে বসবাসরত এসব বসতবাড়ি ধসে পড়েছে। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো।
তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, তাজনিমারখোলা, বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্প, ময়নারঘোনা, শফিউল্লাহকাটা, লম্বাশিয়াসহ ছোট-বড় ২০ ক্যাম্পে ৫ শতাধিক বসতঘর ধসে পড়েছে। ওইসব ঘরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। এদের অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিযাপন করছে।
উখিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক জানান, তিনি সকালে বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে ঘুরে দেখেছেন। তেমন কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি তার নজরে আসেনি। সেখানে কিছু বসতবাড়ি ধসে পড়তে দেখেছেন। এসব পরিবারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের মধ্যে কমপক্ষে এক লাখ ঝড়-বন্যা ও ভূমিধসের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়া ব্যাপক প্রাণহানিসহ মানবিক বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি পাহাড়ের খাদে বসবাসকারি প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার পাহাড় ধসে বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা গুরুতর ভাবনার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কক্সবাজার বালুখালী ও কুতুপালংয়ের বিস্তীরণ বনভূমি এবং টেকনাফের লেদা ও মোছনী ক্যাম্পে নতুন-পুরান প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এরমধ্যে কমপক্ষে ১ লাখ চলতি বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার মারাত্নক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ইউএনএইচসিআর। গত বছর ২৫ আগষ্ট শুরু হওয়া রোহিঙ্গা ঢল কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালীর ঘন বন উজাড় করে পাহাড়ে যত্রতত্র তৈরি করতে থাকে হাজার হাজার ঝুপড়ি ঘর। ঝুপড়িগুলো পলিথিন, ত্রিপল ও বাঁশ দিয়ে তৈরি। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ৫ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ কুতুপালং ও বালুখালীতে বসবাস করছে। তার মধ্যে কমপক্ষে ১ লাখ রোহিঙ্গা পাহাড় ধস ও বন্যার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
You must be logged in to post a comment.