সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / বিবিধ / ‘বাংলাদেশে অনেকে বাঁহাতিদের বেয়াদব মনে করে’

‘বাংলাদেশে অনেকে বাঁহাতিদের বেয়াদব মনে করে’

বাঁহাতিদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনধারাও। তাতে করে আমরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছি, তেমনি উত্তরণ ঘটছে আমাদের জীবনমানেও। এর ভেতর কিছু কিছু কুসংস্কার আজও আমাদের তাড়া করে ফেরে। যেমন বাম হাতে লেখা বা কাজ করা। বাম হাতে লেখা বা কাজকে অনেকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার বাঁহাতিদের সঙ্গে কথা বললে এর সত্যতা বেরিয়ে আসে।

আমরা যখন কোনো মানুষকে বাম হাতে লিখতে বা কাজ করতে দেখি, তখন অনেকেই বিস্ময় মেলে তাকিয়ে থাকি। এ বিস্ময় জাগে বোধ করি বিশ্বজুড়ে বাঁহাতির সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায়। সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ ডান হাতে কাজ করে থাকেন এবং এটিই প্রচলিত ছিল। তাই একটা সময় একজন বাঁহাতি মানুষকে সমাজে মেনে নেওয়াটা সহজ ছিল না। এই চিন্তা থেকেই ইউরোপে কয়েক দশক আগে শুরু হয় বাঁহাতি দিবস উদযাপন। প্রতি বছর ১৩ই আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় লেফট হ্যান্ডার্স ডে বা বাঁহাতি দিবস। মূলত বাঁহাতি মানুষদেরই উৎসর্গ করা হয়েছে দিনটি।

বিশ্বের অনেক খেলোয়াড়ই বাঁহাতি। ছবি: সংগৃহীত

বাঁহাতি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো, বাঁহাতিরা যেন তাদের এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। এ ছাড়া নিত্যদিনের কাজকর্মে বাঁহাতিরা যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ বছর ছিল দিবসটির ২৯তম আসর। যদিও বাংলাদেশে দিবসটি পালন করতে দেখা যায় না।

বিশ্বজুড়ে খ্যাতিমানদের অনেকেই বাঁহাতি। এদের মধ্যে কেউ বিনোদনের, কেউ খেলার আবার কেউ নিজ গুণে নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, হলিউডের জুলিয়া রবার্টস ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ও জর্জ বুশ, কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে ও ম্যারাডোনা; বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমানসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান ব্যক্তি বাঁহাতি।

বাংলাদেশের সমাজে বাঁহাতিদের অবস্থান

আমাদের দেশে বাঁহাতিদের সামাজিক অবস্থান এখনো তেমন একটা জোরালো হয়নি। দেশের নানা প্রান্তে বসবাসকারী বাঁহাতিদের জীবনযাপন যখন খবরের শিরোনাম হয়, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হয়। বার্তা সংস্থা বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত তেমনই একটি খবরে কয়েকজন বাঁহাতি নারীর কথা উঠে এসেছে, যা পাঠে জানা যায় বাঁহাতিদের বর্তমান সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে।

রাজধানীবাসী নুসরাত জাহান বিবিসি বাংলাকে জানান, বাঁহাতি হওয়ার জন্য তাকে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। এমনকি বাঁহাতি হওয়ার কারণে তাকে বিয়ের পর ব্যাপক হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।

নুসরাত জাহান বলেন, ‘যখন হাত দিয়ে খেতে শুরু করি তখন প্রথম বিষয়টাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি দু’হাতে খেতাম। আমাকে ডান হাতে খাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতো। লেখা শুরু করার পরও ডান হাতে লেখার জন্য চাপ দেওয়া হতো। ছোটবেলায়, এমনকি একটা সময়ে আমার বাঁ হাত কিছুদিন বেঁধেও রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশে অনেকে বাঁহাতিদের বেয়াদব মনে করে।’ তিনি বাঁ হাতে সেলাই করেন বলে জানান।

বাম হাতের ব্যবহার নিয়ে সমাজে নানা নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত থাকায় এখনকার বেশিরভাগ বাঁহাতিদের ছোটবেলায় পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হতো ডান হাতে কাজ করতে। তেমনই একজন কলেজ শিক্ষার্থী নাফিসা নাওয়ার।

নাফিসা নাওয়ার ছোটবেলা থেকেই বাম হাতে করে অভ্যস্ত। পরিবারের সবাই ধারণা ছিল, নাফিসার যমজ বোনের যেহেতু এমন অভ্যাস নেই, তাই বড় হলে সেও ডান হাতে সব কাজ করবে। কিন্তু নাফিসা যখন বাম হাতে লেখালেখি শুরু করেন তখন তার মা-বাবা চিন্তায় পড়ে যান। একপর্যায়ে তার মা-বাবা ডান হাতে কাজ শেখানোর জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ করেন।

অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে বাঁহাতিদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে নাফিসা বলেন, ‘ছোটবেলায় যখন বাসার সবাই দেখল যে আমি বাম হাতে লেখালেখি করি, তখন আমার জন্য আলাদা টিচার রাখা হয়েছিল, যেন আমি ডান হাতে লেখা শিখতে পারি। সবাই ডান হাতে লেখে, আমি বাম হাতে লিখি। এটা একটু অন্য রকম দেখায়। তবে আমার টিচার রেখে কোনো লাভ হয়নি। আমি বাম হাতেই লিখি। যেহেতু এটা আমার হ্যাবিট।’

গৃহবধূ আফরোজা সুলতানা লুসিও নাফিসার মতো সমস্যার পড়েছিলেন। পারিবারিক ও সামাজিক প্রথার কারণে তাকে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে জানান তিনি।

আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘আমার মা আমাকে লেখাটা ডান হাতে শিখিয়েছেন। কিন্তু আর বাকি সব কাজ আমি বাম হাতেই করি। এ নিয়ে আশপাশের মানুষ, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বলত যে, মেয়ে বাম হাত দিয়ে কেন কাজ করে, ডান হাতে কাজ করা কেন শেখে না? বড় হলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কী বলবে? আসলে আগেকার মানুষ তো, পারিবারিকভাবে যে বাধা আসে আর কি।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, ‘সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় অনুভূতির কারণে পরিবারগুলোতে এ ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়।’

মানুষ কেন বাঁহাতি হয়, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষ বাঁহাতি। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে তাদের নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের সংস্কার। বাঁহাতিদের এমনকি জোর করে ডানহাতি বানানোর চেষ্টাও আছে। অনেক ক্ষেত্রে এটি উত্তরাধিকার সূত্রেও হয়ে থাকে।

সূত্র:আজাদ চৌধুরী-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

১০ ফেব্রুয়ারি; ইতিহাসের এইদিনে https://coxview.com/radamel-falcao-footballar-birthday-day/

১০ ফেব্রুয়ারি; ইতিহাসের এইদিনে

রাদামেল ফালকাও গার্সিয়া সারাতে (রাদামেল ফালকাও নামে সুপরিচিত) একজন কলম্বীয় পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি ১৯৮৬ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/