সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / ভালবাসার বন্ধন

ভালবাসার বন্ধন

-: সীমা চন্দ্র নম :-

চারদিকে ফুলের বাগান, ফুলের গন্ধে পুরো বাড়ি মূখরিত হয়ে যায়। বাড়িটি দেখলে মনে হয় কোনো রাজবাড়ি, দু-তলা বাড়ি, নিচের তলায় থাকে সরকারি কর্মকর্তা, আর উপরের তলায় থাকে সরকারী কর্মকর্তার সব আসবাবপত্র। বাড়ির সামনে ছিল একটা জারুল গাছ, জারুল গাছের ডালে থাকত দুটি বানর। জারুল গাছের পাশে ছিল তাল গাছ, তাল গাছে ছিল বাবুই পাখির বাসা। সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে সেই বাড়িতে থাকত। ছেলের নাম ছিল রাতুল, মেয়েটির নাম ছিল নিপা। রাতুল ও নিপা বাইরে খেলা করছে, বানর দুটি রাতুল ও নিপাকে দেখে গাছের ডালে খুশিতে লাফালাফি করছে। এমন সময় কোথায় থেকে এক অপরিচিত লোক এসে, রাতুলকে জিজ্ঞেস করে সুরেন্দ্র বাবু বাড়িতে আছে? নীপা বলল হ্যাঁ, বাবা ঘরে আছে লোকটি ঘরে ঢুকে গেল।

বানর দুটি ও নিপা রাতুলের মধ্যে কেমন যেন ভাব হয়ে গেল। বানর দুটি নিচে নেমে এসেছে, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল লোকটি রাতুলের বাবার সাথে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে এসেছে। বানর দুটি লোকটিকে আসাতে দেখে গাছের উপরে লাফ দিয়ে উঠে গেল, লোকটি চলে গেল। রাতুল ও নিপাকে ভাত খেতে ডাকছে, ওরা দু-জন দৌড়ে গেল মায়ের কাছে। মা শাসাচ্ছেন সারাদিন খেলা করলে হবে, পড়া লেখা বাদ দিয়ে, কালকে থেকে স্কুলে চলে যাবে।

সন্ধ্যা হলে বাবুই পাখিরা তাল গাছে চলে আসে। হঠাৎ! রাতে বানর দুটি চিৎকার-চেচামেছি করছে। রাতুল ও নিপা জেগে উঠল আগে, তারপর জেগে উঠল তাদের মা-বাবা সুরেন্দ্র বাবু জানালা দিয়ে তাকাল পাঁচ-ছয়জন মুখোশ পরা ডাকাত দল। প্রতিবেশিরাও জেগে উঠাতে ডাকাত দল পালিয়ে গেল। বানর দুটি না থাকলে ডাকাত দল সব কিছু লুট করে নিয়ে যেত। প্রতিবেশিরাও রাতুলের মা-বাবা বানরগুলোকে ধন্যবাদ জানালো।

সকালে পাখির কিচির-মিচিরে ঘুম ভাঙে, পাখিরা যেন সকালের দূত। রাতুল ও নিপা স্কুলে চলে গেল রাতুলের বাবা চলে গেল অফিসে। রাতুলের মা সারাদিন ঘরে রান্না-বান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সুরেন্দ্র বাবু অফিস থেকে আসার সময় রাতুল ও নিপাকে নিয়ে আসে। রাতুলের মা বিকেলে গাছে পানি দেয়, রাতুল ও নিপাকে আসতে দেখে বানর দুটো লাফাতে লাগল; নিপা বানর-দুটোকে দুটো আপেল দিল ওরা হাত টেনে নিয়ে সেগুলো খাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে রাতুল ও নিপা হাত মূখ ধুয়ে পড়তে বসে।

নিপা রাতুলকে বলল আজ শুক্রবার পুকুরে চল স্নান করে আসি, নিপার কথা সায় দিল রাতুল দুই ভাই-বোন পুকুরে চলে গেল। সঙ্গে বানর দুটো চলে গেল তাদের পিছনে পিছনে, রাতুল পুকুর নেমে গেল নিপা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকল, রাতুল শাপলা ফুল দেখে সেগুলো নিতে যাচ্ছে। নিপা দেখতে পেল ফুলগুলোর কাছাকাছি গিয়ে রাতুল ডুবে যাচ্ছে। বানর দুটো চেচামেছি করছে, নিপা চিৎকার করছে ভাইকে এই অবস্থায় দেখে। বানর মধ্যে একটি সুরেন্দ্র বাবুর লুঙ্গি ধরে টেনে নিয়ে আসে, সুরেন্দ্র বাবু দেখতে পেল তার ছেলে পানিতে ডুবে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি পানিতে লাফ দিয়ে রাতুলকে পানি থেকে তুলে নেয়। রাতুল অজ্ঞান হয়ে গেল, প্রাথমিক পদ্ধতি অবলম্বন করে রাতুলের জ্ঞান ফিরে এল। অনেকটা বানর গুলোর জন্যই রাতুল বেঁচে গেল। এখন থেকে বানরগুলো যেন সুরেন্দ্র বাবুর বন্ধু হয়ে গেল, সুরেন্দ্র বাবু বানর দুটোর গলায় স্বর্ণের রকেট পরিয়ে দিল।

পরে প্রতিদিন বিকেলে সুরেন্দ্র বাবু অফিস থেকে আসলে বানর দুটো তার কাছে চলে আসে। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় এবং দু-চোখে জল চলে আসে সুরেন্দ্র বাবুর।

একদিন রাতুল ও নিপা বাবাকে এসে বলে আমাদের এবার পুঁজোয় চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে হবে বলে বায়না ধরে। নিয়ে যাবে বলে বাবা তাদেরকে কথায় দেয়। সন্ধ্যায় নাস্তা খেয়ে রাতুল ও নিপা পড়তে বসে। তারা বাবাকে দেখে বলে- বাবা আমাদের সাথে বানর দুটোকে নিয়ে যাব বেড়াতে, বাবা যদিও সায় দেয় রাতুলের মা এসে নিষেধ করে। রাত হলে ডাকাতের ভয় থাকে, আমরা না থাকলে বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য বানর দুটোকে রেখে যেতে হবে। দুদিন পর রাতুলের বাবার অফিস বন্ধ হবে পুঁজো উপলক্ষে। রাতুলের বাবা অফিস ছুটি পেয়েছে তাছাড়া রাতুল ও নিপার স্কুলেও ছুটি পেয়েছে। পুঁজো আরম্ভ হয়ে গেল সুরেন্দ্র বাবু স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে বের হল। বানর দুটোর চোখে জল এসে গেল। রাতুল ও নিপার কেমন খারাপ লাগছে? তাদের বন্ধু বানর দুটোকে রেখে যেতে। শুধু কি রাতুল ও নিপার খারাপ লাগছে? সুরেন্দ্র বাবুর অনেক খারাপ লাগছে। গাড়িতে উঠে পড়ল, সবাই দুপুরে গিয়ে পৌছল চিড়িয়াখানায়। প্রথমে রাতুল ও নিপা বাঘ, ভাল্লুক, হাতি দেখতে পেল রাতুল মস্ত বড় এক অজগর সাপ দেখে ভয় পেয়ে গেল। অজগর সাপের সামনে অনেকগুলো মুরগি দেওয়া হল। বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি দেখল রাতুল ও নিপা। তারপর তারা হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়ে নিল।

চারদিন আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে বাড়িতে ফিরে গেল সুরেন্দ্র বাবু সবাইকে নিয়ে। বাড়িতে এসে দেখে বানর দুটো রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওদের গলায় স্বর্ণের রকেট দুটো নেই। বানর দুটোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাতুল ও নিপা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল, সুরেন্দ্র বাবু পাথরের মত দাড়িয়ে রইল যে বানর দুটোর জন্য ছেলের জীবন ফিরে পেয়েছে তাদের চোখের সামনে মৃত্যু দেখতে হল।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/water-distribution-lama-mayor-rafiq-30-4-24-1/

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর পক্ষ থেকে লামা বাজারে জনসাধারণের মাঝে নিরাপদ পানি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/