মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
সম্প্রতি গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীর হামলার পর দেশ জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এক প্রকার ভীতি কাজ করছিল। কিন্তু সব ধরনেল ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে ঈদের আনন্দকে আরো আনন্দময় করে তুলতে মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে নানান দর্শনীয় স্থানে। তন্মধ্যে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠা পাওয়া কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক টানা তিনদিন ধরে পর্যটকে ঠাসা। ঈদের দিন থেকে ভেপসা গরমের মধ্যেও দর্শনার্থীরা উপভোগ করছে বাড়তি আনন্দ।
স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের শহুরে এলাকা ছাড়াও পর্যটকরা বৈচিত্রময় ও প্রায় বিলুপ্ত পশু-পাখি দেখতে ভিড় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। প্রতিদিন কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ হাজার দর্শনার্থীর পা পড়ছে সাফারি পার্কে। ঈদের দিন থেকে পার্কে এই অবস্থা বিরাজ করছে। ঈদ উপলক্ষ্যে পার্কে নতুন করে কোন বন্যপ্রাণী আনা না হলেও আগত দর্শনার্থীদের বেশ আকৃষ্ট করেছে পার্কে প্রবেশের প্রধান গেইটের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাষ্কর্যটি।
রবিবার সকালে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাফারি পার্কে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হালকা বৃষ্টি ও মাঝমধ্যে গরম উপেক্ষা করে ভ্রমণের জন্য পর্যটক ও দর্শনার্থীরা পার্কে ভিড় জমাচ্ছে। পার্কে দেখার মতো রয়েছে- বাঘ, সিংহ, উল্টো লেজী বানর, লাম চিতা, হনুমান, উল্লুক, কালো শিয়াল, জলহস্তী, ওয়াইল্ডবিষ্ট, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, প্যারা হরিণ, মিঠা পানির কুমির, মঁয়ূর, বনমোরগ, বন্য শুকর, বানরসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী।
পার্কে আগত দর্শনার্থীরা মনের আনন্দে ঘুরে ঘুরে দেখছেন এসব বন্যপ্রাণীর বেষ্টনী। কর্তৃপক্ষ পার্কটিকে দর্শনার্র্থীদের কাছে আগের তুলনায় আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পার্কে আরো আর্কষনীয় করে তুলতে পার্কে বাইরে করা হয়ে লেক। দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগ যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীর আধিক্যই ছিল বেশি। তারা বন্যপ্রাণী দেখার পাশাপাশি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মনের সুখে উপভোগ করছেন নান্দনিক বৃক্ষ রাজির ফাঁকে ফাঁকে উন্মুক্ত বিচরণ করা হরিণ, খরগোস। কেউ কেউ টাওয়ারে উঠে দূর-দুরান্ত দেখছে,আবার কেউ হাতিতে চড়ে মনের জিইয়ে রাখা শখ মিটিয়ে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ মোবাইলে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় ছিল ময়ূর, ইমু পাখী, বাঘ ও সিংহ এবং জলহস্তীর বেষ্টনী।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ওমানস্থ বাংলাদেশ স্কুল সাহামের সিনিয়র শিক্ষক জয়রাম দে ও তার স্ত্রী সুচিত্রা দেবী’র এই প্রতিবেদককে জানান, ওমান থেকে একমাসের ছুটিতে দেশে এসেছি। এই একমাসে কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এসেছি। পার্কে বেষ্টনীতে রাখা পশু-পাখীসহ বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখেছি। খুব ভাল লেগেছে। তবে, গত বছর যখন এসেছিলাম আরো খুব সুন্দর ও মনোরম ছিল পার্কটি। কিন্তু ঠিকমত পরিচর্যার অভাবে পার্কের শ্রী হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তাই পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সরকারের পার্কের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে নজর দেয়া দরকার।
সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, ঈদের দিন সকাল থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত পার্কে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম হয়েছিল। পার্কের প্রধান গেইটের বাইরে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিশাল ম্যুরাল ও ভাস্কর্যটি ছিল দর্শনার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।
পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরুল হুদা জানান, ঈদের দিন দুপুর থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়তে থাকে। যা আরও বেশ কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি জানান, ঈদের দিন থেকে গত রবিবার পর্যন্ত অন্তত লক্ষাধিক দর্শনার্থী ও পর্যটকদের পদভারে মুখরিত ছিল পার্ক এলাকা। এ রকম অবস্থা আরো সপ্তাহ জুড়ে অব্যহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
You must be logged in to post a comment.