সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / রোহিঙ্গা সংকট টেকনাফ : এক বছর অতিবাহিত হলেও, শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

রোহিঙ্গা সংকট টেকনাফ : এক বছর অতিবাহিত হলেও, শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

সংগৃহীত ফটো

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের একটি বছর অতিবাহিত হলো। গত এক বছর আগে মিয়ানমার সরকারের জুলুম, নির্যাতন সইতে না পেরে টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী, যুবক যুবতীরা।

সেই ২৫ আগষ্ট ২০১৭ সালের এই দিনটিকে তারা কালো দিবস হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

সেই সূত্র ধরে ২৫ আগষ্ট শনিবার এক বছর আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের সেই নির্মম জুলুম ও গণহারে মানুষ হত্যার বিচার চেয়ে সকাল থেকে শত শত রোহিঙ্গা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে টেকনাফে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা বস্তি গুলো।

প্রতিবাদ সমাবেশে তারা মিয়ানমার সরকারের বিচার, রাখাইনে ফেরার পরিবেশসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। পাশাপাশি তাদের সঠিক নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে স্বদেশে ফেরারও আকুতি জানান। এদিকে পালিয়ে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এক বছর হয়ে পূর্ণ হলেও তাদেরকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি এখনো ঝুলে আছে।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হলেও এখনো রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। ২৫ আগষ্ট সকাল থেকে টেকনাফের রইক্ষ্যং পুটিবনিয়া, হ্নীলার আলীখালী, লেদা, নয়াপাড়া, শালবন, জাদিমোরা, দমদমিয়া ও বাহারছড়ার শামলাপুর বস্তিতে রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ মিছিলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নরনারী অংশগ্রহণ করেছেন।

এই সময় রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ১০০ নারীকে ধর্ষণ, ৩০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশু এতিম, ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আরাকান রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ও ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যার বিবরণের চিত্র তুলে ধরে।

রোহিঙ্গাদের বিশাল বিক্ষোভ মিছিল গুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ভিতরে থাকা অভ্যন্তরীণ সড়ক গুলো প্রদক্ষিণ করে। এই সময় তাদের সাথে তাল মিলিয়ে দীর্ঘদিনের পুরোনো নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প এলাকা থেকে শত শত নর-নারী, যুবক-যুবতী এক বছর আগের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিলিত হয়। রোহিঙ্গা নেতারা তাদের বক্তব্যে, তাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার নেত্রী সম্বোধন করে ধন্যবাদ জানান এবং এদেশের সেনা, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও উখিয়া-টেকনাফের মানুষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তারা মিয়ানমার সরকারের বিচার, সেদেশে ফেরার পরিবেশসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। এসময় নাগরিকত্বসহ দাবি-দাওয়া মেনে তারা স্বদেশে ফেরত নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানান। এসময় উপস্থিত রোহিঙ্গারা হাত তুলে বিভিন্ন স্লোগানে রোহিঙ্গা বস্তি গুলো মুখরিত করে তোলে।

উল্লেখ্যঃ-গত এক বছর আগে মিয়ানমারে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩০টি অস্থায়ী শিবিরে জীবনযাপন করছে। গত বছর ২৫শে আগস্ট দেশটির রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরুর পর ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসব শিবিরে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও এভাবে অনিশ্চিত ভাসমান অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে চান না তারা।

লেদা ক্যাম্পের আব্দর রশিদ নামে এক রোহিঙ্গা জানান, ইতিমধ্যে ৩ বার রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বারবার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদের উপর নতুন করে শুরু নির্যাতন। গেল ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টেও একইভাবে আমাদের মা-বোনদের বর্বর নির্যাতন চালায় তারা। তারপরও আমরা স্বদেশে ফিরতে চাই। তবে এবার আমাদেরকে পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে হবে। আর রোহিঙ্গা হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে হবে।

ওই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, মিয়ানমার সরকার আমাদের এত বেশি নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতনের চিত্র মনে করলে এখনো পুরো শরীর শিউরে উঠে। আমরা নির্যাতন সইতে না পেরে নিজের জন্মভূমি পেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আমাদের মন কাঁদে।

আমরা ফিরে যাবো, আমাদের নেতারা যে দাবি দিয়েছে সেই দাবি গুলো মেনে নিতে হবে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া জানান, গত বছর এই দিনে রোহিঙ্গাদের উপর যে জুলুম, অত্যাচার, গণহারে মানুষ হত্যার বিচার পাওয়ার দাবী নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করবে বলে অনুমতি চেয়েছে। আমরা তাদেরকে বলেছি শান্তিপূর্ণ ভাবে যে কোন কর্মসূচি হাতে নিলে আমরা তাদেরকে সহযোগীতা করবে।

তবে সেই সুযোগ নিয়ে যদি কেউ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটালে আমার তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। পাশাপাশি অত্র এলাকায় কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সদা প্রস্তুত রয়েছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/06/Rohingya-Camp-coxs-bazar-8.jpg

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও গোলাগুলিত : নিহত ১

নিজস্ব প্রতিনিধি; উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/