সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রথম ঈদ

শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রথম ঈদ


হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
আকাশে বাতাসে ছুঁয়ে যাক মোদের খুশির মোড়ক, প্রাণের হিল্লোল হৃদয়ের কল্লোল বিরামহীন ছুঁটে চলা রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে খুশির ঝিলিক দেখে স্থানীয়দেরাও আনন্দে উল্লাসিত। চরম কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শিশুরা আজ অতীত ভুলে গিয়ে নতুন করে কাঙিখত সেই ঈদে ঘুরে বেরিয়েছে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে আত্মীয়ের বাসায়। এবারই প্রথম তাদের ক্যাম্পে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। পুরো এক বছর ক্যাম্পে থেকে মিয়ানমারে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো মুছে আবেগময় হ্নদয়ে কলুষমুক্ত জীবন, পরিবার ও তাদের পারস্পরিক ভালবাসার পরশে একে অপরকে পরম আবেগে বুকে জড়িয়ে বড়রা কান্না করছে আর ছোটরা মহাখুশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

রোহিঙ্গা মাঝি মোরশেদ আলম বলেন, গত বছর আমরা রমজানের এই ঈদে ছিলাম আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে। আজ নিয়তি আমাদের এখানে টেনে এনেছে। স্বজনহারা এক রোহিঙ্গা যুবক আমানত উল্লাহ বলেন, গত বছর আমি বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়েছি। আজ বাবা নেই। আমিও আমার দেশে নেই। বাবাকে ছাড়া এখানে ঈদ করতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি আজ ঈদের এই মহাখুশির দিনে বাবাকে খুব মিস করছি। ক্যাম্পের ভেতর মাকে জড়িয়ে অনেক্ষণ কান্না করেছি। মনটাকে হালকা করতে বালুখালী ডি ব্লক থেকে কুতুপালং মধুরছড়া ক্যাম্পে এক বন্ধুর কাছে যাওয়ার জন্যে বের হয়েছি।

বালুখালী ক্যাম্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট ছোট ছেলে মেয়ের দল নতুন পোষাক পরে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে। আট থেকে দশ বছরের এসব শিশুদের সাথে কথা হলে রোকেয়া, সানজিদা, নুর কায়েদা, নুর আয়েশা, নুরে জান্নাত ও আমেনা বলেন, আমরা কোথাও যেতে পারি না। আজ ঈদ, তাই হাকিমপাড়া ক্যাম্পে আমরা সবাই আমাদের খালার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি।

এবার ঈদ তাদের কেমন লাগছে জানতে চাইলে, তারা এক বাক্যে বলেন, খুব খুশি লাগছে। তবে আমরা ক্যাম্প এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারি না। আমাদেরও ইচ্ছে করে ক্যাম্পের পাশে উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকত দেখতে যেতে। মা তারাতারি বাসায় ফিরতে বলেছেন। তাই বেশিক্ষণ বেড়াতে পারবো না। এক্ষুণি চলে আসতে হবে। ছবি তোলার পর তাড়াহুড়া করে টমটমে করে তারা চলে গেলেন হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

বালুখালী ডি ১৩ ব্লকের ভেতর ছোট্ট একটি কুড়ে ঘরে প্রবেশ করি এবং তাদের খোঁজ খবর নিই।ওই বাড়ির গৃহিনী ছমিরা আক্তার বলেন, স্বামী স্ত্রী ছেলে মেয়ে ও শাশুড়ীসহ ১৪ জনের পরিবার আমাদের। ডাব্লিউ এফপি আমাদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। খাবারের চাউল বিক্রি করে ছোট ৩ মেয়ে ও ২ ছেলেকে ঈদের পোষাক কিনে দিতে পারলেও আমরা বড়রা ঈদের কোনো পোষাক কিনতে পারিনি। ছোট শিশু তছলিমা পলিথিনের প্যাকেট থেকে একটি জামা বের করে সরাসরি গায়ে জড়িয়ে ফেললো। এর পর ঘুরে ফিরে সবাইকে দেখালো। তারপর জামাটি খুলে নিয়ে আবার সেই প্যাকেটে রেখে দিলো। এরই মধ্যে এই পোষাক নিয়ে অনেক গল্প বলা হয়ে গেছে ৮ বছরের রোহিঙ্গা শিশু তছলিমার।

কক্সবাজার-টেকনাফ আরাকান সড়কের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তার পাশে দাঁড়ানো নুর আয়েশা, নুর কায়েদা, ও নুরে জান্নাতের সাথে কথা হলে এরা সবাই সঙ্গীদের নিয়ে আড্ডায় মেতেছিল। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চলছিল তাদের বেড়ানোর আনন্দের এসব কথা। রোহিঙ্গা শিশুদের আনন্দ, যেন বাঁধভাঙা জোয়ার।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/water-distribution-lama-mayor-rafiq-30-4-24-1/

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর পক্ষ থেকে লামা বাজারে জনসাধারণের মাঝে নিরাপদ পানি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/