অজিত কুমার দাশ হিমু, লামা থেকে ফিরে
তামাক পাতা উৎকন্ঠ গন্ধ এখন আর চোখে পড়ছে না। মাঠের পর মাঠ, বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় শুধু চোখে পড়ছে শুধু সাদা আর সাদা ফুল। এগুলো হচ্ছে তুলা ফুল। এদৃশ্য কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী উপজেলা লামার। তামাকের বদলে এখন তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছে পাহাড়ি অধিবাসিরা। এই তুলা চাষ করে অনেক পাহাড়ীর জনগোষ্ঠির ভাগ্য বদলে দিয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এর পরিধি আরো বাড়বে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয় অধিবাসিরা। তারা তুলা চাষে সরকারী সহযোগীতা কামনা করেছেন। এবছর ১৩শত ৬০ মেট্রিক টন পাহাড়ি তুলা ও ২শত ৭০ মেট্রিক টন সমভূমি তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। যা দেশের মোট চাহিদার এক-পঞ্চমাংশ এখানকার তুলা দিয়ে মেঠানো সম্ভব হবে।
কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী উপজেলা লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের লাইক্ষ্যং, নাইক্ষ্যং ও গজালিয়ায়, সদর উপজেলার রেইচা ইউনিয়নসহ বান্দরবানের সাত উপজেলার পাহাড়ি ও সমভূমিতে তুলা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তুলা চাষ করছেন।
কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় মাঠের পর মাঠ, বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় দেশি তুলার পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। যেখানে বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে আগ্রাসী তামাক চাষ করা হতো, সেখানে বর্তমানে তুলা চাষ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লামা উপজেলার চাষীরা তামাক চাষে অভ্যস্থ ছিল। ভরে গিয়েছিল সবুজ তামাকে। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ধরণ পাল্টিয়েছে। এখন জুমিয়ারা মিশ্র ফসলের পাশাপাশি তুলা চাষ করছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হাইব্রিডের পাশপাশি দেশে উদ্ভাবিত উন্নত জাতের তুলা চাষ করেছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলের মাটি তুলা চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষীরা তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তবে সরকারী সহায়তা পেলে পাহাড়ে তুলা চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য এলাকায় পতিত জমিতে ব্যাপক তুলা চাষ করা যাবে।
সদর উপজেলার রেইচা ইউনিয়নের তুলা চাষী চিংনুপ্রু মার্মা জানান, ইতোপূর্বে সমভূমিতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ করা হতো। তুলা চাষে সাফল্য পাওয়ায় এখন বিস্তীর্ণ মাঠে উন্নত জাতের তুলার চাষ করা হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি ১১ থেকে ১২ মণ তুলা উৎপাদন করা যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
বান্দরবান জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব জানান, দেশের মোট উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ তুলা বান্দরবানের ওই সব উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। চলতি মৌসুমে বান্দরবান জোনের অধীনে জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় ৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে পাহাড়ি তুলা ও ১শত ৮০ হেক্টর জমিতে সমভূমি জাতের তুলা চাষ হযেছে। এবছর ১৩শত ৬০ মেট্রিক টন পাহাড়ি তুলা ও ২শত ৭০ মেট্রিক টন সমভূমি তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দেশের মোট চাহিদার এক-পঞ্চমাংশ এখানকার তুলা দিয়ে মেঠানো সম্ভব হবে।
তিনি আরো জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের রেকর্ড মতে বান্দরবানে সাড়ে ৪হাজার চাষী বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠে তুলা উৎপাদন করছে। প্রশিক্ষণে তাদেরকে উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে ব্যাপক ধারনা দেয়া হয়। যেহেতু বন্দরবানে তুলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, তাই পরিকল্পিত এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তুলা এখানে তুলা চাষ করা যেতে পারে। তার মতে, পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষ খুবই লাভজনক। পাহাড়ের মাটি ও পরিবেশ তুলা চাষের জন্য উপযোগী।
You must be logged in to post a comment.