সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / স্বদেশে ফিরতে হবে তা ভুলতে বসেছে রোহিঙ্গারা

স্বদেশে ফিরতে হবে তা ভুলতে বসেছে রোহিঙ্গারা


হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
মিয়ানমারের মংডু ফিয়াজিপাড়া থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে মোরশেদ আলমের (৩২) সাত সদস্যের পরিবার। প্রথমে এই রোহিঙ্গা পরিবার ছিল পলিথিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী একটি ঝুপড়ি ঘরে। এখন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মোরশেদ আলম তার ঝুপড়ি ঘর ভেঙ্গে ফেলেছেন। সেখানে বাঁশের খুঁটি দিয়ে মজবুত করে তৈরি করেছেন নতুন একটি ঘর। অনেকে লম্বা সারিবদ্ধ ঘরে এক সাথে মিলে মিশে বসবাস করছেন।

মোরশেদ আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের নতুন করে মজবুত ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কত দিন এখানে থাকতে হবে, জানি না। থাকার ঘর, ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখার জন্য বিদ্যালয়, এনজিও সংস্থার উন্নত মানের হাসপাতাল, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পাঁচটি পুলিশ ফাঁড়ি, নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট, মসজিদসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখে মনে হচ্ছে আমাদের খুব দ্রুত রাখাইনে ফিরতে হবে না। এখানে বাসযোগ্য নিরাপদ পরিবেশ আমরা পেয়েছি। মোরশেদ আলমের মতো এখানে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গা তাদের স্বদেশ ফেরা নিয়ে অনিশ্চিয়তায়। তাদের মনে শঙ্কা –ভয়, আদৌ কি ফিরে যেতে পারবেন নিজ দেশে? আন্তর্জাতিক চাপে ফিরতে পারলেও সহসা যে হচ্ছে না, সেটাও তাদের বদ্ধমূল ধারণা। বেশির ভাগ রোহিঙ্গা মনে করছেন, অতীতের মতো তাদের দীঘ সময় বাংলাদেশে থাকতে হবে।তাই এদের অনেকেই এখন মনোযোগী হচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘরটি যথাসম্ভব মজবুত করে তৈরি করতে।

ক্যাম্পে কথা হলো বুচিডং মিঙ্গিজীপাড়া থেকে দশ মাস আগে পালিয়ে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলভী আব্দুল খালেকের সাথে। তিনি জানালেন, মিয়ানমার সরকার একদিকে মুসলমান রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে, অন্যদিকে এখনও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পরিবেশ তৈরি করছে না। গত দুদিন আগেও নো ম্যান্স ল্যান্ডে মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গা শিশুর উপর গুলি চালিয়েছে। তারা এখনও আন্তরিক হতে পারেনি।

এই মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, সমাধান যার হাতে, সেই মিয়ানমার সেনা প্রধান বলছেন, রোহিঙ্গারা সেই দেশের নাগরিক নয়। তারা বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙ্গালি। এর থেকে পরিস্কার ধারণা হয়, মিয়ানমার সরকার আলোচনার নামে কূটকৌশল করছে। তারা রোহিঙ্গাদের কখনও ফিরিয়ে নেবে না। তিনি আরও বলেন, হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। অতীতে মিয়ানমারের পার্লামেন্টে আমাদের প্রতিনিধিও ছিল।

১৯৮২ সালে আমাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয় সামরিক জান্তা সরকার। তিনি বলেন, আমরা যারা আরাকানের আদি বাসিন্দা, তারা হলাম বহিরাগত। আর রাখাইন বৌদ্ধ যারা অন্য দেশ থেকে এসেছে, তারা হয়েছে সে দেশের নাগরিক। সত্যিই দুর্ভাগা জাতি রোহিঙ্গা। মিয়ানমার বলছে, যারা যাবে, তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেওয়া হবে না। অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হবে।

মিয়ানমারের এই কথায় চরম হতাশ প্রকাশ করলেন, কুতুপালং মধুরছরা ক্যাম্পের মাঝি আলী আকবর। এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, মিয়ানমার মন্ত্রীর এ বক্তব্যে স্পস্ট হয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরতে দেবে না। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালেও আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল।দীঘ দুই যুগের বেশি সময় তাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে দেয়নি মিয়ানমার সরকার। এর ওপর নতুন নতুন সংকট তৈরি করে ফের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, রাখাইনকে রোহিঙ্গাশূন্য করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করছে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী।

রোহিঙ্গা নেতা আলী আকবর বলেন, মিয়ানমার সরকারের ওপর আমাদের আর আস্থা নেই। নাগরিক অধিকারসহ পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা আর স্বদেশে ফিরে যাবে না।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/06/Rohingya-Camp-coxs-bazar-8.jpg

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও গোলাগুলিত : নিহত ১

নিজস্ব প্রতিনিধি; উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/