হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের চরম নির্যাতনের এক বছর পূর্তিতে বিশ্বজুড়ে চলছে মিয়ানমারের সমালোচনা। নিজের চোখের সামনে বার্মিজ আর্মিদের গুলিতে স্বজনদের নিথর দেহ ফেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা এগারো লাখের চেয়ে বেশি রোহিঙ্গাদের এক বছর পূর্ণ হয়েছে হত ২৫ আগস্ট। সেই দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনী লাইন করে যুবতীদের গণধর্ষণ করেছে। বার্মিজ আর্মি ছাড়াও বিজিপি, নাসাকা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা এ হত্যাযঞ্জ চালিয়েছে। রাখাইনে ভয়াবহ সহিংসতা ও গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে সেখানে মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ আগস্ট উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিশাল সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে বর্বর নিপীড়ন ও জুলুম করা হয়েছে তা বিশ্ববাসিকে আবার স্বরণ করিয়ে দিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্যে নাগরিকত্বের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত। এই রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর অস্থিত্ব সংকট, নিষ্ঠুরতা এবং মাতৃভূমি ত্যাগের শিকার। তারা বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে এক বছর আগে ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। সেজন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানায়। আমাদের এই সমস্যা এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজের ভূমি রাখাইনে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে ফিরে গিয়ে থাকতে পারি। এটা নিশ্চিত করতে আজকের এই সমাবেশের আয়োজন।
রোহিঙ্গা নেতারা আরো বলেন, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চিকে জানাতে চাই, বুদ্ধের অহিংস পথ অনুসরণ করে সহিংসতা বন্ধ করুন, আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নিন। রোহিঙ্গা নেতা কলিম উল্লাহ, সেলিম উল্লাহ, মোরশেদ আলম, সৈয়দ আলমসহ একাধিক মাঝিরা বলেন, মিয়ানমারে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ট। দেশটির রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। আমরা রোহিঙ্গা মুসলমানেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বাস করছি। তবে আমরা মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনা মিয়ানমার। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও কট্ররপন্থি বেসামরিক বৌদ্ধরা সহিংস দমন পীড়ন চালাচ্ছে।
সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গা যুবক আবুল কাশেম বলেন, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে আমার বড় ভাই ইসমাঈলকে। আহত হয়ে আমি ছুটে এসেছি স্বজনদের সাথে বাংলাদেশে। আমার বাবাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ রকম হাজারো আবুল কাশেম এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, জাতিগত বিরোধ ও ধ্বংসলীলার পর প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে রোহিঙ্গা। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। মিয়ানমার নাগরিকদের সে দেশের সরকারকে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা তাদেরই সমাধান করতে হবে।
You must be logged in to post a comment.