পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তিন ব্যাপী ১৩৮তম ঐতিহ্যবাহী রাজপূন্যাহ উৎসব শুরু হয়েছে। রাজ সিংহাসন ও প্রসাদ না থাকলেও রয়েছে রাজকীয় আচার অনুষ্ঠান এবং রীতি রেওয়াজ। এখনো প্রজারা রাজা বাহাদুরকে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রণাম করে।
প্রতিবছর প্রজাদের কাছ থেকে জুমের বাৎসরিক খাজনা আদায় অনুষ্ঠান হিসেবে রাজপূণ্যাহ মেলার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকালে রাজপূন্যাহ উৎসবের উদ্ধোধনী দিনে ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পোষাক পরিধান করে রাজবাড়ী থেকে রাজকীয় বাঁশির সুরে অনুষ্ঠানস্থলে নেমে আসেন বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ ১৭তম রাজা ইঞ্জিনিয়ার উচপ্রু মারমা।
এসময় তার সৈন্য-সামন্ত, উজির-নাজির, সিপাহী শালাররা রাজাকে গার্ড দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল মঞ্চে নিয়ে যান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসমারিক বিমান চলাচল পযটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈচিং এমপি, সেনা রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, পাবত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, জেলা প্রশাসক মিজানুর হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সহ সরকারী-বেসরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৮৭৫ সালে ৫ম তম বোমাং রাজা সাক হ্ন ঞো’র আমল থেকে বংশ পরস্পরায় ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ উৎসব হয়ে আসছে। রাজপূণ্যাহ মেলায় বসেছে নাগর দোলা, সার্কাস, বিচিত্রানুষ্ঠানু, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপসহ ব্যাাতিক্রমি নানা আয়োজন।
এছাড়াও হরেক রকম জিনিসপত্রের দোকান এবং সারারাত ব্যাপী চলবে যাত্রা অনুষ্ঠান। রাজপূণ্যাহ উৎসব পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলায় পরিনত হবে। শুধুমাত্র বান্দরবান, রাঙামাটি নয় রাজপূণ্যাহ মেলা দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটকও।
বোমাং রাজা সিংহাসনে উপবিষ্ট হলে সারিবদ্ধভাবে বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার ৯৫টি মৌজা এবং রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই ও রাজস্থলী দুটি উপজেলার ১৪টি মৌজাসহ মোট ১০৯টি মৌজার হেডম্যান, ৮ শতাধিকেরও বেশি কারবারী, রোয়াজারা রাজাকে কুনিশ করে জুমের বাৎসরিক খাজনা ও উপঢৌকন রাজার হাতে তুলে দেন।
প্রসঙ্গত: ঢাক, ঢোল পিটিয়ে রাজকীয় পদ্ধতিতে দূর্গমাঞ্চল গুলোতেও পূণ্যাহ মেলার বার্তা পৌছিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে। বংশ পরাম্পরায় বোমাং রাজ প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের সবচেয়ে বয়জ্যেষ্ঠ পুরুষ রাজা নির্বাচিত হন।
You must be logged in to post a comment.