সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / নির্বাচন সংক্রান্ত / আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা তাঁরা

আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা তাঁরা

লায়েকুজ্জামান ও শাখাওয়াত হোসাইন :

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিদ্রোহ দমন এখন আওয়ামী লীগের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর দুই সিটির কাউন্সিলর পদে সমর্থনপ্রত্যাশীদের গণভবনে ডেকে নাম ঘোষণা করা হয়। ওই দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতি ওয়ার্ডে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে দেখা যায়, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক প্রার্থী কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তাঁরা ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর ৬নং ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করা এবং আসন্ন নির্বাচনে আবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হাজি রজ্জব হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের লোক, দল করি। গত নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পাইনি। এবারও আমাকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়নি। বিদ্রোহী হয়ে গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছি। দল আমাকে বহিষ্কার করেনি। জয়ের পর বুকে টেনে নিয়েছে। বিদ্রোহী হয়ে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করলেও দল আবার বুকে টেনে নেবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী সালেক মোল্লার কাছে পরাজিত আজমত দেওয়ান এবার দলীয় সমর্থন না পেয়ে নিজেই বিদ্রোহী হয়েছেন। গতবার বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীকে এবার দল সমর্থন দিয়েছে। বিদ্রোহী হওয়া আজমত দেওয়ান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত নির্বাচনে দল আমাকে সমর্থন দিলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তাঁর অনুসারীদের সমর্থনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। এবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তাঁর অনুসারীরা আমাকে বিদ্রোহী হতে বলেছেন। জয়লাভ করলে পরবর্তী নির্বাচনে হয়তো আবার আমাকেই সমর্থন দেবে। বিদ্রোহী হলে তো সমস্যা নেই। দল আরো বেশি গুরুত্ব দেয়।’

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিগত দিনে সংসদ, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দল কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও নির্বাচনের পর ঢালাও ক্ষমা করে দলে স্বপদে বহাল রাখার কারণে দিনে দিনে বিদ্রোহীর সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের ক্ষমাকে অন্যরা উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করছে। বিদ্রোহীদের নিবৃত্ত করা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত উপজেলা নির্বাচনে প্রায় অর্ধশত সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা তাঁদের এলাকায় কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জিতিয়ে এনেছেন ওই প্রার্থীদের। ওই সব সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দল। উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়েছিলেন এমন নেতাদের দলীয় কমিটিতে না রাখার সিদ্ধান্ত হলেও তাঁদের অনেকে উপজেলা পর্যায়ে দলের নেতৃত্বে ঠাঁই পেয়েছেন।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনেও দেখা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় বিতর্কিত হলেও প্রথমে চেষ্টা করেছেন তাঁদের পছন্দের লোককে দলীয় সমর্থন পাইয়ে দিতে। আর ব্যর্থ হলে পছন্দের লোককে বিদ্রোহী প্রার্থী করে জিতিয়ে আনতে কাজ করেছেন। আসন্ন নির্বাচনেও ঢাকার দুই সিটিতে একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যেদিকে হাঁটছে, সংসদ সদস্যরা হাঁটছেন এর উল্টো দিকে।

কয়েকজন সংসদ সদস্যের এলাকায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা, আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও নন—এমন অনেকে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। হাজি রফিকুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ ৫০নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দল তো মূল্যায়ন করবেই না। ফলে বিদ্রোহী না হয়ে আমার উপায় নেই।’

ঢাকা উত্তরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মাহমুদা বেগম ক্রিক। ওই ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মতিউর রহমান। এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মতিউর।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন রশিদ জনি। দল তাঁকে এবারও সমর্থন না দেওয়ায় তিনি ফের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাজমুল আলম ভুইয়া জুয়েল। তবে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হারুন অর রশিদ মিঠু। এবার আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। ওই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী হয়েছেন ইসমাইল হোসেন মোল্লা।

গত নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছিলেন আতিকুর রহমান। তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজি রজ্জব হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়ার পর তিনি রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। এবার ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন সালাউদ্দিন রবিন। এ অবস্থায় আবারও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। একই সঙ্গে যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পীও বিদ্রোহী প্রার্থী।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয় পান দেওয়ান আবদুল মান্নান। এবার আওয়ামী লীগ তাঁকে সমর্থন দেয়। এ ওয়ার্ডে এবারও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।

১২ নম্বর ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছিলেন নারী নেত্রী শিরিন রোকসানা। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী ইকবাল হোসেন তিতু। এবার ইকবাল হোসেন তিতুকে সমর্থন দিয়ে ফের পরিবর্তন করা হয়েছে মনোনয়ন। শিরিন রোকসানার স্বামী মুরাদ হোসেনকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এবার এই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী ইকবাল হোসেন তিতু।

গত নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬নং ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাসিবুর রহমান মানিক। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু সাঈদ, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাসুদ। এবার দল এই তিনজনকে সমর্থন দিয়েছে। এই তিন ওয়ার্ডেই এবার নতুন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো ওয়ার্ডে একাধিক বিদ্রোহীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই বিদ্রোহীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা। এত বিদ্রোহী প্রার্থী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দল।

 

সূত্র: deshebideshe.com – ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/04/Election-Sagar-22-4-24.jpeg

ঈদগাঁওতে দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও : ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/