পৃথিবী এবং সৌর জগৎ তিলে-তিলে নানা পরিবর্তন চাপিয়ে দিচ্ছে আমাদের ওপর। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী তার ঘূর্ণন গতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ৫৯ সেকেন্ডে মিনিট করা ‘উচিত’।
গবেষকদের দাবি, আসল ঘূর্ণনের সঙ্গে তাল মেলাতে কমপক্ষে ‘একটি নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড’ দরকার।
ক্ষুদ্র এই পরিবর্তনের তাৎপর্য সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে না ঠিকই, কিন্তু বৃহৎ অর্থে এর মাহাত্ম্য অনেক।
একটি নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড দরকার মূলত বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে মহাকাশের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জন্য।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি ঊহ্য সেকেন্ড যেটি অতিরিক্ত গণনা করা হচ্ছে, তার কারণে অনেক গবেষণা কাজ ব্যাহত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১২ সালে যোগ হওয়া একটি লিপ সেকেন্ড বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইটের ক্রাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে রেডিট, ইয়েলপ, লিঙ্কডইনের মতো সাইটও আছে।’
এর কারণ হলো এই সব অ্যাপ্লিকেশনের সময় আগে থেকে নির্ধারিত একটি সিস্টেমে শো করতে থাকে। সেটিতে গড়বড় হয়ে যায় লিপ ইয়ার আসলে। তখন এক সেকেন্ডের ব্যবধানে ডেটা সরবরাহ সমস্যা হয়।
পৃথিবীর আবর্তন গতি হল তার কক্ষপথে নিজেকেই একবার প্রদক্ষিণ করা। অর্থাৎ নিজের চারদিকে পৃথিবী একবার করে পাক খায় আর তার সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। এই হিসাবেই এত দিন পর্যন্ত মানুষের সভ্যতা অভ্যস্ত। সেই হিসাবে ২৪ ঘণ্টার প্রতিটিতে ৬০ মিনিট এবং প্রতি মিনিটে ৬০ সেকেন্ড করে গণনা করা হয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক খবর বলছে, পৃথিবীর এই আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতির বেগ খুব সামান্য হলেও বেড়ে গেছে! তার মানে এখন আর নিজের পথে এক পাক ঘুরতে পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা সময় লাগছে না; তার চেয়ে একটু কম সময় লাগছে।
পৃথিবীর সময়রক্ষকরা জানিয়েছেন, মোটামুটি মিনিট পিছু ১ সেকেন্ড করে সময় কম লাগছে!
তাহলে কি ৫৯ সেকেন্ডে মিনিট?
এই জায়গায় আসার আগে লিপ সেকেন্ডের বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করতে হবে। সাধারণত আমরা দুইভাবে সময় মেপে থাকি। সাবেকি পদ্ধতিতে যেমন ঘড়ি চলে তেমনি ফ্রিকোয়েন্সি স্ট্যান্ডার্ডের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের অ্যাটম ধরে চলে। কখনো কখনো এই দুইয়ের মধ্যে হিসাবে একটা পার্থক্য তৈরি হয়। তখনই দেখা দেয় লিপ সেকেন্ডের বিষয়টি। এক্ষেত্রে ওই পার্থক্য পূরণের জন্য ১১:৫৯:৬০ এর বদলে ১১:৫৯:৫৯ করে দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন ও রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিসের সুপারিশে প্রথমবার এই লিপ সেকেন্ড উদ্যাপিত হয়েছিল। তার পর থেকে সাকুল্যে ২৬ বার বিষয়টা অনুসরণ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ৩০ জুন যেমন এখনো পর্যন্ত শেষবারের মতো লিপ সেকেন্ড পালন করা হয়েছিল।
কিন্তু এই লিপ সেকেন্ডের উদ্যাপন নানা ওয়েবসাইট এবং স্টক মার্কেটের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনে। ওয়েবসাইটের সার্ভারগুলো আগে থেকেই কোডিং করা থাকে এবং শেয়ার মার্কেটও নির্দিষ্ট হিসাব ধরে চলে। ফলে এক দিকে যেমন লিপ সেকেন্ডের উদ্যাপন নানা ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করে। তেমনি মাঝে মাঝে শেয়ার বাজারের সূচকেরও পতন ঘটায়।
তাই পৃথিবীর নতুন আবর্তন গতির হিসেবে এবার যদি একটা নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড বেশি হিসাব করতে হয়, তা হলেও নানা দিকে সমস্যা তৈরি হবে।
সূত্র: deshebideshe.com – ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.