ঘড়িয়াল (Gharial) বা মেছো ঘটওয়ালা কুমির হল লম্বা তুণ্ড (snout)যুক্ত কুমীর জাতীয় জলচর সরীসৃপ। মেছো ঘটওয়ালা কুমির বেশ লম্বা হয়। ঘড়িয়াল মোহনার কুমিরের মতো আগ্রাসী নয়। একসময় গঙ্গা ঘড়িয়ালে ভর্তি থাকত। কিন্তু আজ ঘড়িয়াল এক বিপন্ন প্রাণী।
ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম কোনো ঘড়িয়াল প্রকৃতিতে নেই। ভারতের চম্বল আর যমুনা নদীতে ঘড়িয়াল নামে বিশেষ জাতের কুমির রয়েছে একহাজারের মতো৷ আর আশাপাশের দেশ পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশেও এর অস্তিত্ব রয়েছে৷ বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় পদ্মা, যমুনা থেকে ঘড়িয়াল আটকা পড়ার খবর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রজননক্ষম ঘড়িয়াল ও আবাসস্থল টিকে আছে কিনা তা জানার জন্য সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চে ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (কারিনাম) ডক্টর এস এম এ রশীদের তত্ত্বাবধানে একটি ঘড়িয়াল সার্ভে প্রকল্প শুরু করেছে।
কারিনাম ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্পিসিস ঘড়িয়াল একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে ছিল। এখন ঘড়িয়াল বিলুপ্ত প্রায় জলচরি সরীসৃপ। নদীতে ঘড়িয়াল থাকলেই নদী ভালো আছে এটা বলা যায়। তাই ঘড়িয়ালকে সংরক্ষণ আমাদের সকলের দায়িত্ব। ঘড়িয়াল এক সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে দেখা গেলেও এখন প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। আবাসস্থল ধ্বংস আর খাদ্য সংকটে ঘড়িয়ালরা হুমকির সম্মুখীন।
(পুরুষ ঘড়িয়ালের ঘড়া)
ঘড়িয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus।ঘড়িয়ালের নামের অর্থ: নাক (তুণ্ড)-এর ডগায় ঘড়ার মত আকৃতি, যা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ঘড়িয়ালের ক্ষেত্রে বেশ বড় হয়ে থাকে। আমাদের পদ্মা নদীতে বসবাসকারী ঘড়িয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus আর ইংরেজী নাম Indian gharial বা Fish-eating Crocodile বা Gavial। কুমিরাকৃতির এই প্রাণীর তুণ্ড কুমির তুণ্ডের চেয়ে অনেক সরু এবং মাছ ধরার উপযোগী। এ কারনেই ছোটরা জলজ পোকা-মাকড় ও এর লার্ভা খেয়ে থাকলেও প্রাপ্তবয়ষ্করা মত্স্যভূক হয়ে থাকে। মূলত মত্স্যভূখ হওয়ায় এরা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবুও জেলেদের জালে ধরা পরার পর এদের খুব কম সংখ্যকই বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। অসচেতনার কারণের আতঙ্কিত জেলেরা এদের ক্ষতিকর মনে করে পিটিয়ে আহত করে এবং মেরে ফেলে।
যেহেতু রাজশাহীর গোদাগারী এলাকায় এখনও ঘড়িয়াল ধরা পরার খবর পাওয়া যায় তাই বিশেষত এই এলাকার জেলে ও অন্যান্য জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো এবং একই সাথে এখানে ঘড়িয়ালের একটি অভয়াশ্রম তৈরি করতে পারলে তা হতে পারে এদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার একটি সময় উপযোগী প্রয়াস। এছাড়াও সংরক্ষিত অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রজননের ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরর্তিতে উৎপন্ন বাচ্চাদের প্রকৃতিতে ছাড়ার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। যে শিশু ঘড়িয়ালটি বর্তমানে রাজশাহী চিড়িয়াখানায় আশ্রয় পেয়েছে সেটি পুরুষ না স্ত্রী তা জানা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। প্রাপ্ত ঘড়িয়ালটি যদি পুরুষ হয় তাহলে তা হবে এ জাতীয় কার্যক্রমের জন্য একটি সুসংবাদ। কারণ রাজশাহী চিড়িয়াখানায় বর্তমানে দুটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ঘড়িয়াল সংরক্ষিত আছে।
সূত্র:allanimalshere.blogspot.com
You must be logged in to post a comment.