এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সারা দেশে পাস করেছে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছে যারা সমাজের মানুষদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছে।
কারণ সমাজ ও জীবনের অনেক প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে তারা মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারাও পারে সাফল্য বয়ে আনতে।
তবে শোনা যাক কিছু জ্ঞান পিপাসু অদম্য নারীর গল্প-
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শারমিন আক্তার। ২০১৫ সালের দেশি-বেদেশি বেশ কিছু গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিল সে। নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে লেখাপড়ার পথে অটল থাকা এই সাহসী শিক্ষার্থী এসএসসিতে কৃতিত্বপূর্ণ ফল করেছে। পড়াশোনায় অনেক প্রতিকূলতা ও বাধার মুখে পড়েও শারমিন দমে যায়নি। সে মানবিক বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ চার দশমিক ৩২ পেয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউসি) ২০১৭ পুরস্কারপ্রাপ্ত শারমিন বলে, এত বড় ঝড় না এলে ঠিকই আমি জিপিএ-৫ পেয়ে আরও কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল উপহার দিতে পারতাম। একজন আইনজীবী হওয়া আমার জীবনের লক্ষ্য।
টাঙ্গাইলের কালীহাতি উপজেলার তাসলিমা খাতুনের কথা হয়তো অনেকেরই মনে রয়েছে। ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফিয়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ টাকা দিতে না পারায় দরিদ্র ঘরের সন্তান তাসলিমাকে ফরম পূরণ করতে দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এতে দমে যায়নি সে।
স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও স্থানীয়দের সহায়তায় এসএসসিতে অংশ নেয় তাসলিমা। উপজেলার নরদহি উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে সে ‘এ-’ পেয়ে পাস করেছে।
ইচ্ছে থাকলে জগতের অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় এমনটিই দেখিয়ে দিয়েছে বগুড়ার ধুনটের নাইস খাতুন। জন্ম থেকেই দুই পা অকেজো। কাজ করে না ডান হাতও। তাতে কি? অদম্য ইচ্ছে শক্তির উপর ভর করেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় নাইস।
বাবা নজরুল ইসলামের কোলে চড়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। সেই নাইস এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ তিন দশমিক ৫৫ পেয়েছে।
একে তো অভাবের সংসার, আরেক দিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের বায়োজিদ হোসেনের মেয়ে বিউটি আক্তারের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছে। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম দমাতে পারেনি তাকে। ভাগ্যের ওপর দোষ না দিয়ে থেমে থাকেনি সে।
সে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এখন সে ওই গ্রামের দৃষ্টান্ত।প্রতিবন্ধী হলেও ক্লাসের সবচেয়ে মনযোগী এই মেয়েটি পা দিয়ে লিখে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
নাটোরের বাগাতিপাড়ার মলি রানী। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা-মা বিয়ে দেয় তাকে। পারিবারিক ব্যস্ততায় আর পড়াশুনা করা হয়ে ওঠেনি তার। কিন্তু ছেলেদের পড়ানোর সময় বুঝতে পারেন পড়াশুনা তারও করা প্রয়োজন।
সিদ্ধান্ত নেন আবার পড়াশুনা করবেন তিনি। স্বামীরও অমত ছিল না এতে। শুরু করে দেন ছেলের সঙ্গে পড়াশুনা। সেই মলি রানী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ চার দশমিক ৫৩ পেয়েছেন এবং ছেলে মৃন্ময় পেয়েছে জিপিএ চার দশমিক ৪৩।
সূত্র:priyo.com,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.