সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানব মর্যাদা-মিয়ানমারের ফন্দি

বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানব মর্যাদা-মিয়ানমারের ফন্দি

থাইংখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শ্রমিকরা কাজ করার সময়ের ছবি।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আলোচনা সভায় উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা আরো সদয় হই। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে সদভাব সদাচারণ ও সহযোগিতার হাত আরো বাড়িয়ে দিই। তাদের প্রতি মমত্ববোধের কারণে আজ আমরা মিলেমিশে সহবস্থানে থেকে সুন্দর আচরণ করছি। এর ফলে আইন শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আমরা উখিয়াবাসী বিশ্বের দরবারে সুন্দর একটি পরিচিতি লাভ করেছি। এটা স্থানীয়দের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে হয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নামে কৌশল অবলম্বন করেছে মিয়ানমার সরকার। একেক সময় একেক কথা বলার পর এবার বলছে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চাইলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে দেশটি। কিন্তু স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার প্রধান তিনটি বিষয় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও নিজ বসতভিটেতে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনোটাই মানছে না তারা। এসব বিষয়ে বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে আসছে। এমনকি এই মূল বিষয়ের বিপরীতে দেশটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে সেখানে আরো নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে রোহিঙ্গারা। ফলে মিয়ানমারের এই নতুন কৌশলের মুখে নতুন করে অনিশ্চিয়তায় পড়ল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে যে সাত লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, সেটা ছিল সাম্প্রতিক শরণাথী ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে মানবেতর। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুবই করুণ পরিস্থিতির মধ্যে এখন দিন কাটছে তাদের। শিগগিরই তাদের আবাসভূমিতে ফিরে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাদের কষ্টের বিষয়টি বড় ধরণের মানবিক সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের বিদেশী সহযোগীদের উচিত এই ঘরবাড়ি ও স্বজনহারা জনগোষ্ঠির কল্যাণের দিকটিতে নজর দেয়া এবং সেই মুসলিম রোহিঙ্গা ভাইদের প্রতি নজর দেয়া। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তারা কি নিরাপদে ও সম্মানের সাথে ফিরে যাওয়ার জন্য ধৈয ধরে অপেক্ষা করবে? এই লক্ষ্যটা এখন অনেকটা অবাস্তব। নাকি তাদের মধ্যে যে জঙ্গি সংগঠন রয়েছে তারা এদেরকে সহিংসতার পথে টেনে নিয়ে যাবে? মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে গঠিত হয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশান আরমি (আরসা) জাতিগত এবং ধমীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠি হিসেবে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন যে সব নিযাতনের শিকার হয়েছে, এবং এতে তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ ও বেপরোয়া মনোভাবের জন্ম দিয়েছে, সেটাকে পুঁজি করেই গড়ে উঠছে আরসা।

বিভিন্ন গোষ্টির নেতাদের মাধ্যমে আরসা একদিকে আশার বাণী ছড়ালেও মূলত ধমীয় বৈধতা এবং ভয় ছড়িয়েই তারা নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অবস্থার উন্নতির আগে আরও অবনতি ঘটতে পারে। বৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের কষ্টের সীমা নেই। বন্যার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পগুলো। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আতিথেয়তা দেখিয়ে আসছে।

রোহিঙ্গা নেতা মোরশেদ আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রধান তিনটি দাবি পূরণ না হলে তারা স্বদেশে ফিরে যাবে না। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অনেক সংস্থাগুলোও এসব শরত পূরণ ব্যতিরেখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে নয় বলে মিয়্নমারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। পালস কক্সবাজার ও সি এন এফ সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, যুদ্ধ, সন্ত্রাস বা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রতি মিনিটে প্রায় ২০ জন মানুষকে তাঁর সব কিছু ছেড়ে পালাতে হচ্ছে।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সুস্পষ্ট গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের ওপর বিশ্বের নানাবিধ চাপ অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারও মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে ফিরিয়ে নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো দেশটির নানা কূটকৌশলের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে।মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের দেওয়া ১০ হাজার রোহিঙ্গার দ্বিতীয় তালিকা নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারকে দেওয়া ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার প্রথম তালিকা থেকে সাত দফা যাচাই বাছাই করে মাত্র এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।

রোহিঙ্গারা ততদিন স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চাইবে না, যতদিন না ফিরিয়ে নেওয়ার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এর জন্য দরকার ওদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং নিজ বসতভিটেতে রাখা। এগুলো না হলে ফিরিয়ে নিয়েও লাভ নেই।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ; কক্সভিউ ডট কম; https://coxview.com/water-distribution-lama-mayor-rafiq-30-4-24-1/

তীব্র গরমে লামা পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাঝে পানি বিতরণ

লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর পক্ষ থেকে লামা বাজারে জনসাধারণের মাঝে নিরাপদ পানি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/