সকাল কিংবা সাঁঝ, এক ঝাঁক পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পরিবেশ। এই শহরে নিজ ঘরে বসে শেষ কবে উপভোগ করেছেন? এমন প্রশের উত্তরে হয়তো ‘মনে নেই’ উত্তরটাই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে।
পেরিয়ে আসা শেষ যুগটা অনেক দ্রুত বদলে দিয়েছে চিরচেনা এই শহরটাকে। ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি জনসংখ্যা বহন করার দরুন প্রতিদিনই বাড়ছে দালানকোঠা আর যানবাহন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে শহরের বৃক্ষরাজি। আগে যেখানে বাড়ির বাইরে সবারই দু-চারটা ফলজ, বনজ গাছ ছিল, সেখানে নগরায়ণের প্রচেষ্টায় গাছেরা আজ ঠাঁই পেয়েছে বারান্দা আর জানালার পাশে সাজানো ছোট্ট টবের ভেতর।
ফলজ, বনজ আর ঔষধি গাছের বদলে ফুল ও পাতাবাহার গাছের জায়গাটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে পাখিরা হারিয়েছে তাদের নীড়। উঁচু উঁচু দালানের ভিড়ে বসবাসের স্থান অনেক হলেও তাদের জায়গাটুকু অবশিষ্ট নেই। তাই দিন দিন পাখির সংখ্যা শুধু কমেই চলেছে।
কয়েক বছর আগেও ঢাকার বুকে উড়ে বেরিয়েছে হরেক প্রজাতির পাখি। ভোর আর সন্ধ্যায় সেই সব পাখির গানে মুখরিত হতো ঢাকার পরিবেশ। শীতের আগমনবার্তায় নাম নাজানা অনেক পাখির আগমনে ভরে উঠত এ শহর। বিকেল গরিয়ে যখন সন্ধ্যা আসত তখন আকাশজুড়ে পাখিরা দল বেঁধে উড়ে বেড়াত। সে ছিল এক অপরূপদৃশ্য। এখন এই ইট-পাথরের শহরে সেই রূপ আর নেই।
আধুনিকতার মায়াজালে আমরা সবাই এতটাই মোহিত যে প্রকৃতির সৌন্দর্যকেই ভুলে গিয়েছি। যার জন্য আজ পাখিরা হারিয়ে গিয়েছে এই শহর থেকে। তাইতো এখন চড়ুই, শালিকসহ অনেক প্রজাতির পাখি আর দেখা যায় না। এমনকি ঢাকার শহরে এক সময় রাজ করা কাকের সংখ্যাও এখন অতি নগণ্য।
মুষ্টিমেয় পাখিরা শহরে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা উদ্যানগুলোতে কোনোমতে টিকে থাকলেও কয়েক বছর পরে তাদের শুধু চিড়িয়াখানার খাঁচার মাঝেই দেখতে হতে পারে।
সময় এসেছে বলবার, ‘দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য লও এ নগর’।
নগরায়ণ যেমন জরুরি তেমনি প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখাও প্রয়োজন। নয়তো সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন প্রকৃতি তার রূপ হারানোয় বিপন্ন হয়ে পড়বে সব কিছু।
পাখিরা ফিরে আসুক। আবার শহরকে মুখরিত করুক তাদের কলতানে। গড়ি সবাই পাখির আবাসস্থল, সাজাই নতুন করে প্রকৃতি দিয়ে এ শহর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও দেখুক-শুনুক প্রকৃতির মাঝে শত প্রজাতি পাখির কিচিরমিচির করে গান গাওয়া, আর আকাশের বুকে উড়ে বেড়ানো।
সূত্র:আরিফ আহমেদ/risingbd.com,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.