সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / জীব ও প্রকৃতি / উপকারী প্রাণী গুইসাপ কি হারিয়ে যাচ্ছে?

উপকারী প্রাণী গুইসাপ কি হারিয়ে যাচ্ছে?

বাংলাদেশের বনজঙ্গল, ঝোপঝাড়, বাস্তুবন ও কৃষি জমিতে এক সময় খুব বেশিই দেখা যেত সরীসৃপ প্রাণী গুইসাপ। কিন্তু এখন তেমন একটা দেখা যায়না৷ আজকাল নিরীহ উপকারী এই প্রাণীটি বিভিন্ন কারণে আমাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে বিলুপ্তির পথে। দেশের অনেক প্রাণী গবেষক এবং প্রাণী বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন বেশিরভাগ ব্যক্তিই মনে করছেন মানুষের কারণেই এই প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে।

এ প্রসঙ্গে প্রাণীবিদেরা মনে করেন, নিরীহ এই প্রাণীটি বিলুপ্তির জন্য মানুষই দায়ী। কারণ গুইসাপ আমাদের ক্ষতি তেমন একটা করেনা তবে বেশিরভাগই উপকার করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এই প্রাণীটির অবদান সবচেয়ে বেশি। এটা আমাদের চারপাশের বিষধর সাপ খেয়ে এদের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

তাঁরা আরও মনে করেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি এর চামড়া পাচার করার কাজে লিপ্ত। এ নিরীহ প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব শুধু প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের একার নয়, আমাদের সকলের।

বর্তমানে গুইসাপের তিনটি প্রজাতি কোনো রকমে টিকে আছে৷ এগুলো হল কালো গুইসাপ, সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপ৷

কালো গুইসাপ লোকালয়ে বসতবাড়ির আশেপাশে বেশি দেখা যায়।

বড় গুইসাপ বা রামগদি। এটা এক প্রকার বড় জাতের গিরগিটি। সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এরা। তবে গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মতো। ওজন ২৫ কেজির মতো হতে পারে। তবে বেশির ভাগেরই ওজন এর অর্ধেক। বড় গুই বা রামগাদি দেখতে গাঢ় বাদামি বা কালচে, তাতে হলুদ রঙের রিং বিদ্যমান। পা ও নখ লম্বাটে। লেজ চ্যাপ্টা ও শিরযুক্ত। এরা দ্রুত গাছে উঠতে পারে। সাঁতরে খাল-বিল-পুকুর সহজেই পাড়ি দিতে পারে। বড় গুইসাপ দেখতে পাওয়া যায় ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচীনে। এরা ভালো সাতারু। পৃথিবীতে কমোডো ড্রাগন হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুইসাপ প্রজাতি।

সোনা গুইসাপ চোখে পড়ে হাওড় ও বিলের আশেপাশে৷ গুইসাপ মূলত গর্তবাসী প্রাণী৷ মাটির গর্ত, উইঢিবি, গাছের কোটর ও ফাটলে এরা বাস করে৷ পানিতেও দেখা যায়৷ এরা সাঁতার কাটতে ও গাছে উঠতে পারে৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- এদের প্রধান খাদ্য কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, পচা-গলা প্রাণীদেহ ও উচ্ছিষ্ট।

বড় গুইসাপ মাছ, সাপ, ব্যাঙ ও পাখি খায়। তারা ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপও খায়। ছোটসাপ, ব্যাঙ, ইদুর, মাছ, কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি৷ সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয়৷ গুইসাপ খুবই নিরীহ প্রাণী৷ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়৷ তারা অতি উপকারী প্রাণী৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের উপকার করে৷ ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুইসাপের ভূমিকা অতূলনীয়৷ এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে প্রধান খাদ্য পোকামাকড়রে সংখ্যা বেড়ে যাবে, ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে, অনুকূল পরিবেশ হবে বিষাক্ত সাপের৷ যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য মোটেও সুখকর নয়৷ ফসলের জমিতে পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রার কীটনাশক, ফলে অনেক উপকারী অনুজীব ধ্বংস হয়ে যায়ও মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়৷ ফসলে সৃষ্টি হয় নিম্নমাত্রার বিষক্রিয়া যা মানুষকে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে৷ অন্যদিকে গুইসাপ ও ব্যাঙ এসব কীটনাশকের চেয়ে অনে বেশি কাজ করে কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়া৷ এরা মৃত জীবজন্তু খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে৷ তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক৷ এদের চামড়া অতি মূল্যবান৷

এই উপকারী প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে৷ এদের অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে৷ বর্তমানে যে তিনটি টিকে আছে হয়তো কিছুদিন পর আর থাকবেনা৷ এদের বিলুপ্তির কারণ- চোরাচালান, অতিমাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, বনজঙ্গল ধ্বংস ও হাওড়া বিলের পরিবেশ বিনষ্টকরা৷ এদের অধিকাংশ মারা যায় মানুষের আক্রমণে৷ খাবারের সন্ধানে যখন হানা দেয় হাঁস মুরগির ডিম ও ছানার দিকে, তখন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ অনেক সময় লোহার তৈরী বিশেষ ফাদে শুটকি মাছ বা মৃত ছানা টোপ দিয়ে মারা হয়৷ কোন কোন উপজাতি জনগোষ্টী খাদ্যের জন্য শিকার করে৷ এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী প্রাণীটি৷

গুইসাপ সংরক্ষণ করা অতি জরুরি৷ এদের শিকার ও পাঁচাররোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ জনসচেতনতা সৃষ্টি করে অবাধ শিকার বন্ধ করতে হবে৷ প্রয়োজনে টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় উপকারী প্রাণীদের রক্ষায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে৷ প্রাণী সংরক্ষণবিরোধী বিজ্ঞাপন অনুমোদন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ সরকার, জনগণ ও প্রাণী অধিকার সংরক্ষণে জড়িতদের যৌথ উদ্যোগেই সম্ভব প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা, সতেজ থাকা প্রকৃতি ও সুন্দরের মাঝে৷

সূত্র:newsg24.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

তুমব্রু সীমান্তে চোরাই পথে আনা ২৭টি মহিষ জব্দ করেছে বিজিবি

কামাল শিশির; রামু : পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ‍্যংছড়ির উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মায়ানমার থেকে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/